নিজস্ব প্রতিবেদক:২০১১ সালে নাটোরের সিংড়ায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. ফরহাদ হোসেন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। শনিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার সকালে র্যাব-৩ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র্যাব-৩ এর একটি দল শনিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা এলাকায় একটি অভিযান চালায়। অভিযানে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যা মামলায় পলাতক আসামি মো. ফরহাদ মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ফরাহাদ মন্ডলের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, ২০০১ সালে ভুক্তভোগী মোছা. ফাতেমা বেগমকে বিয়ে করে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ১৫ হাজার টাকা শ্বশুরের কাছ থেকে নেয় ফরহাদ মন্ডল। পরবর্তীতে তাদের পরিবারে দুইটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে আরও যৌতুকের টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয়। তখন ফাতেমা তার বাবা-মাকে যৌতুকের বিষয়টি জানায়। ফাতেমার বাবা আর যৌতুকের টাকা দিতে পারবেনা বলে জানায়। পরে ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড় ভাই মিলে ফাতেমাকে অমানুষিক নির্যাতন করতে শুরু করে। ভুক্তভোগী তার শ্বশুর বাড়ির অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। তখন ফাতেমার বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় আরো ৫০ হাজার টাকা দেয়। শ্বশুর বাড়ি থেকে দেয়া যৌতুকের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আবারও ফরহাদ ও তার বাবা-মা, বড়ভাই মিলে ফাতমাকে আরও টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয় এবং শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে।
ঘটনাটি ফাতেমা তার বাবা-মাকে জানায়। তখন তার বাবার কাছে টাকা না থাকায় ঘটনার ১১ থেকে ১২ দিন আগে মেয়ের জামাইকে একটি গরুর বাছুর দেয়। কিন্তু ফাতেমার বাবা টাকা না দেয়ায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি রাতে ফাতেমাকে তার স্বামী ফরহাদ শারিরিক নির্যাতন করে। আর তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
র্যাবের ভাষ্য, ঘটনার পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে ফাতেমার বাবা-মাকে মোবাইলে খবর দেয়। তার বাবা-মা এসে তার মেয়েকে শয়ন কক্ষের মেঝেতে রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। ফাতেমার গলায় ও বাম চোখের উপরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। ঘটনার পরে ফাতেমার বাবা সিংড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ফরহাদ মন্ডল, তার বড় ভাই মো. ফজল, বাবা হামিদ আলী এবং মা মোছা. ফরিদা বেগমকে আসামি করা হয়।
ওই মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ফরহাদকে আসামি করে চার্জশীট দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে ফরহাদ গ্রেপ্তার হয়ে সাত থেকে আট মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পেয়ে এক বছর পর সে ওমানে চলে যায়। দীর্ঘ তিন বছর ওমানে প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে ফিরে আসে। বিদেশ থেকে আসার পর সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় বিয়ে করে তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করে। সেখানে সে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
আর ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত ১৭ জানুয়ারি ফরহাদের মৃত্যুদন্ড রায় দেন।
গ্রেপ্তারকৃত মো. ফরহার মন্ডল নাটোর জেলার সিংড়া থানার মুন্সি বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মো. হামিদ আলীর ছেলে।
এনডিডিটভিবিডি/২১জানুয়ারি/এএ