নিজস্ব প্রতিবেদক:নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশ থেকে ফারুক হোসেনের হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। সংস্থাটির দাবি হত্যায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ সরাসরি জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী ও লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. নিজাম উদ্দিন, মো. সোহাগ, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. রনি হোসেন এবং মো. বাদশা।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার সময় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি সকাল ১০ টার সময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি চোখ উপড়ানো অজ্ঞাতনামা একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই লাশের সাথে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং ওআইভিএস ডিভাইসের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা লাশটির নাম ও পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিশ্চিত হয় যে মৃতব্যক্তির নাম ফারুক হোসেন। এ ঘটনায় নিহতের মা মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজদারি বৃদ্ধি করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর সহায়তায় র্যাব-১ এর যৌথ দল রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী এবং লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে মো. নিজাম উদ্দিন, মো. সোহাগ, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. রনি হোসেন ও মো. বাদশাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময়ে তার কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়।
র্যাব বলছে, নিহত ফারুক হোসেন স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের সাথে রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। সে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামের পরিবহনের ‘টিকিট কাউন্টার ম্যান’ হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করতো। সে টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় বাসের টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতো। গত ৮ জানুয়ারি সকাল ১০ টার সময় ফারুক কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে যায়। প্রতিদিনের মত নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় না ফিরলে তার মা সহ পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পায়। এ সময় তার পরিবারের লোকজন তাকে সম্ভব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান পায়নি। পরবর্তীতে গত ৯ জানুয়ারি তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত নিজাম উদ্দিন গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা এক্সপ্রেস নামের একটি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করায় ফারুকের সাথে তার পরিচয় ও সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে নিজাম উদ্দিনের সাথে ফারুকের বিভিন্ন লেনদেনের কারণে সম্পর্কের অবনতি হয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। গত ৮ জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনের কাছে ফারুক পাওনা টাকা চাইলে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে নিজাম ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েক জনের সাথে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৮ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় নিজাম মোবাইলে ফোন করে ফারুককে টাকা নেওয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলে। পরবর্তীতে ফারুক টাকা নিতে কাউন্টারে আসলে গ্রেপ্তারকৃত নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ফারুককে মারধর করে। একপর্যায়ে নিজামের নির্দেশে গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ফারুককে জোরপূর্বক ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি খালি বাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আর বাসের মধ্যে আবারও ফারুকের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দেশিয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ ও রনি ফারুকের হাত-পা চেপে ধরে। আর গ্রেপ্তারকৃত বাদশা বাসে থাকা টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে ফারুকের বাম চোখ উপড়ে ফেলে। একপর্যায়ে ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হলে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ফারুকের লাশ বাসে নিয়ে কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড এলাকা দিয়ে ঘুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে পাশে রঘুরামপুর এলাকার নির্জন রাস্তার পাশে ফেলে বাসটি নিয়ে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত নিজাম উদ্দিন ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে সাত বছর ধরে কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে চাকরি করতো। সে ওই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে টঙ্গী এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে লক্ষীপুরের সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত বাদশা গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি গ্রীল ওয়ার্কশপে কাজ করতো। তার সাথে গ্রেপ্তারকৃত নিজাম উদ্দিন ও রনির আগে পরিচয়ের সূত্রে সখ্যতা ছিল। সে ওই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে টঙ্গী এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
গ্রেপ্তারকৃত রনি ঢাকা এক্সপ্রেস ও লাবিবা ক্লাসিক পরিবহনের টঙ্গী স্টেশনের কাউন্টার মালিক। সে ওই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ১৭ বছর ধরে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করতো। সে ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। তার বিরুদ্ধে ঝালকাঠি, রাজাপুর থানায় মারামারি সংক্রান্ত একটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত জহিরুল ইসলাম ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে চার বছর ধরে গাড়ি চালকের চাকরি করতো। সে ওই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। তার বিরুদ্ধে লক্ষীপুরের সদর থানায় একটি মামলা রয়েছে।
এনডিটিভিবিডি/১২জানুয়ারি/এএ