ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম বন্দরকে দুবাইভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা মঞ্চ এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। বন্দর হস্তান্তরের পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ ও বিদেশি প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ওপর গুরুতর হুমকি তৈরি করছে। দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড নামের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মাধ্যমে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিপি ওয়ার্ল্ড এমন একটি কোম্পানি যারা বিশ্বব্যাপী মার্কিন নৌবাহিনীর ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘Customs-Trade Partnership Against Terrorism (C‑TPAT)’ কর্তৃক প্রত্যয়নপ্রাপ্ত এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন বন্দরে মার্কিন সামরিক জাহাজের সেবা প্রদান করে থাকে। তদুপরি, ইসরায়েলের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার শিপিং কোম্পানি ‘জিম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস’-এর সঙ্গে তাদের দৃঢ় ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। এমন একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রভাবসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে দেশের সবচেয়ে লাভজনক ও কৌশলগত বন্দর তুলে দেওয়া দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হুমকি।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বর্তমানে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। গত অর্থবছরে এই টার্মিনাল থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ হয়েছে, যা বন্দরের মোট কার্যক্রমের ৪৪ শতাংশ। পুরো টার্মিনালটি দেশের অর্থায়নে নির্মিত এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও রয়েছে পর্যাপ্ত। এমন একটি সফল স্থাপনাকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পেছনে জাতীয় স্বার্থ নয়, বরং রাজনৈতিক চাপ এবং সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর প্রভাব কাজ করছে বলে তাদের আশঙ্কা।
ফ্যাসিবাদ বিরোধি ছাত্রজনতা মঞ্চের আহ্বায়ক জাকি সুমন বলেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেই নয়, বরং কৌশলগত নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরে মার্কিন প্রভাব প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে এটি ভবিষ্যতে সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের পথও উন্মুক্ত করতে পারে। সংগঠনটির সদস্য সচিব ডিকে সোলায়মান উক্ত মানববন্ধনে পাচটি দাবি উথ্থাপন করে।
১. চট্টগ্রাম বন্দরের হস্তান্তর প্রক্রিয়া অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে।
২. এ বিষয়ে নির্বাচিত সরকারের জাতীয় সংসদে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ও গণশুনানির আয়োজন করতে হবে।
৩. বন্দর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে।
৪. বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যেকোনো কৌশলগত চুক্তি সম্পাদনের আগে জাতির নিরাপত্তা ও স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
নিপিড়ন বিরোধি জুলাই মন্চের সদস্য সচিব মুত্তাকিন মুন বলেন , ইতিপূর্বে বিএসসির সাবেক এমডি থাকা অবস্থায় কমোডর এসএম মনিরুজ্জামান ও সাবেক মন্ত্রী বন্দর খেকো সালমান এফ রহমানের জোগসাজোসে ৬ টির বাজেট নিয়ে ৪টি জাহাজ ক্রয় করে, এতে বিএসসির ক্ষতি প্রায় ৫শত কোটি টাকা। যা লোপাট করেছে বিএসসির সাবেক এমডি কমোডর এসএম মনিরুজ্জামান- সালমান এফ রহমান।
বর্তমানে সালমানের দোসর চট্টগ্রাম বন্দরের দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান সালমানের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে ডিপি ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে ৩১ জনের জন্য বন্দরে পাশের আবেদন করেন। তার ভেতর ১৯ জন ভারতীয় আর একজন মাত্র বাংলাদেশি।
ডিপি ওয়াল্ডের মধ্য দিয়ে ভারত এবং আমেরিকার যৌথ খেলাধুলার গ্রাউন্ড তৈরি করা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের নৌবাহিনীর সাথে র এর যৌথ কাজের স্থায়ী সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুকির। তাই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ভারত এবং আমেরিকার হাত থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশের বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত প্রতিরোধ করার ঘোষনা দেন তারা।
দেশপ্রেমিক নাগরিক, সুশীল সমাজ, বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবী মানুষ ও মিডিয়াকে এই চক্রান্ত প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।