ঢাকা , মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪

একই পদে দুই ধরণের” বৈষম্যমূলক বেতন গ্রেডের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
বাংলাদেশ
একই পদে দুই ধরণের” বৈষম্যমূলক বেতন গ্রেডের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক : একই পদে দুই ধরণের” বৈষম্যমূলক বেতন গ্রেডের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটরবৃন্দ। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অডিটর ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটরবৃন্দের সমন্বয়ক মো. আজিজ বলেন, ডিপার্টমেন্টের সকল পর্যায়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে (অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার, এসএএস সুপার, অডিটর, জুনিয়র অডিটর) অডিটরদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলতে হয়, আমাদের এই অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির মঞ্চ ও প্যান্ডেল গত ১১ তারিখ মধ্যরাতে একদল দুষ্কৃতিকারী ভেঙ্গে দেয়। আর আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে বিতর্কিত করার প্রয়াসে বহুমূখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের সংযত আচরণের বিপরীতে বিভিন্ন প্রকার শৃঙ্খলা ভঙ্গের বানোয়াট অভিযোগ এনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায় অবমাননা এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ইতিবাচক মতামতকে উপেক্ষা করে ‘অডিটর' পদটিকে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করে অর্থ মন্ত্রণালয় গত ১১ সেপ্টেম্বর বৈষম্যমূলক প্রহসনের জিও জারির প্রেক্ষিতে এবং সিএজি কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিরাজমান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী ও সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী একটি কুচক্রীমহল জনসেবা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগে বৈষম্য জিইয়ে রাখা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে (স্পেশাল অরিজিনাল জুরিসডিকশান) দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর- ৯৩৯৯/২০১৫ এর রায় গত ০২-০২-২০১৬ তারিখে প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ে “ অডিটর পদটিকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালতে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ২৭১১/২০১৬ দায়ের করা হলে বিগত ১৯ মার্চ ২০১৭ তারিখে বিগ্য আদালত আপিল খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে সরকার পক্ষ থেকে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে সিভিল রিভিউ পিটিশন নম্বর- ৩৯৮/২০১৮ দায়ের করা হলে বিগত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে আদালত রিভিউ পিটিশনটি খারিজ করে দেয়। রায়ের প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র রিটকারী ৬১ জন অডিটরের পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে স্পষ্টতই বৈষম্যের সৃষ্টি করে। অডিটর পদটিকে ১০গ্রেডে উন্নীত না করায় বাকি প্রায় তিন হাজার ৫০০ অডিটর ১১তম গ্রেডে অবস্থান করে। আদালতের রায় সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন না করায় ৩টি কনটেম্পট পিটিশন (কন্টেম্পট পিটিশন নম্বর-৭৫৯/২০১৯, ২৬৪/২০২১ এবং ৫৬৯/২০২১) দায়ের করা হয়। কনটেম্পট পিটিশনের রায়েও পিটিশনকারী অডিটরদের আগের দেওয়া রায়ের অনুরূপ মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।

ওই রায়ের আলোকে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগের স্মারক নম্বর- ৩২৮, তারিখ: ৩ নভেম্বর ২০১৩ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর-৫৫ তারিখ: ১১ এপ্রিল ২০১৮ এর আলোকে অডিটর পদকে ১১তম হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে (পূর্বে বাস্তবায়নকৃত ৬১ জন অডিটরের ন্যায়) গত ৮ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সিএজি কার্যালয় ‘অডিটর' পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেড (২য় শ্রেণী) তে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে স্মারক নম্বর- ৫৬৫, তারিখ: ১২ আগষ্ট ২০২৪ মাধ্যমে সচিব, অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়। তারপ্রেক্ষিতে, অর্থ মন্ত্রণালয় এর প্রশাসন-২ অধিশাখা হতে স্মারক নম্বর-৩৪০ তারিখ: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ এর মাধ্যমে অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে (২য় শ্রেণী) উন্নীতকরণ করা যাবে কি না, সে বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। সেই আলোকে, আইন ও বিচার শাখার স্মারক নম্বর-৭৮ তারিখ: ২০ আগষ্ট ২০২৪ এর মাধ্যমে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সিএজি কার্যালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরসমূহের সকল ‘অডিটর' পদের বেতন ১১তম গ্রেড হতে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের সম্মতিসহ মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে  পাঠান। প্রায় তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর বিগত ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ থেকে পত্র স্মারক নম্বর-৩৮৬ এর মাধ্যমে বলা হয়, “কনটেম্পট পিটিশন নম্বর-৭৫৯/২০১৯, ২৬৪/২০২১ এবং ৫৬৯/২০২১ এর সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন। কেননা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০ অক্টোবর ২০২২ তারিখের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মামলার সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিঃশেষ হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। আর বর্ণিত কনটেম্পট পিটিশনগুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় আপিল দায়ের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
ওই আপিলের বিষয়ে আদালতের আদেশ প্রাপ্তির সাথে সাথে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” পরবর্তীতে পত্র জারির ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বিগত ১১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ থেকে স্মারক নম্বর-৩৯১ এর মাধ্যমে আগের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখের পত্রে উল্লেখকৃত তিনটি কনটেম্পট পিটিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট পিটিশনার অর্থাৎ অডিটরগণকে রিট পিটিশন নম্বর-৯৩৯৯ ২০১৫ এর ৬১ জন পিটিশনারের ক্ষেত্রে প্রদত্ত সুবিধার অনুরূপ সুবিধা দিয়ে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়ে সিজিএর বরাবর চিঠি দেওয়া হয় যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে জারিকৃত পত্রের সহিত সাংঘর্ষিক ও স্ববিরোধী।

তিনি বলেন অডিটর পদটিকে ১১ তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত উপেক্ষা করে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরপর দু'দিনে দুই ধরনের অপ্রাসঙ্গিক ও স্ববিরোধী পত্র জারি আদালত অবমাননার সামিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মো. আল আমিন, আলিমুর রহমান ডালিম, মো. শাহিনুর রহমান, মো. আলী আকবর সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এনডিটিভিবিডি/১৫সেপ্টেম্বর/এএ