ঢাকা , বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

গাজীপুর বিআরটিএতে ঘুষ ছাড়া হয় না কাজ

ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০২৫
বাংলাদেশ
গাজীপুর বিআরটিএতে ঘুষ ছাড়া হয় না কাজ

ডেস্ক রিপোর্ট: গাজীপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কাজে গ্রাহকদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। নিয়ম মেনে আবেদন করলেও নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। তবে নির্ধারিত দালালের মাধ্যমে টাকা দিলে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিসে’ সব কাজ দ্রুত হয়ে যায়।

সম্প্রতি গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয় থেকে মালিকানা পরিবর্তন করা কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। এক ব্যক্তি জানান, তিনি নিজে গিয়ে মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করলে কাগজপত্রে ত্রুটি দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দালাল জিন্নাতের মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই তার কাজ সম্পন্ন হয়।

আরেক ভুক্তভোগী জানান, গাজীপুর-থ-১২-২৯৩০ নম্বরের একটি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য তিনি প্রথমে নিজে চেষ্টা করেন, কিন্তু নানা অজুহাতে তার আবেদন আটকে দেওয়া হয়। পরে দালালের মাধ্যমে একই পরিমাণ টাকা দিয়ে সহজেই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

একটি সূত্র জানায়, জানুয়ারি মাসে গাজীপুর বিআরটিএ অফিস থেকে অন্তত ৭৫টি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে, যার প্রতিটির ক্ষেত্রে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর-দ-১১-০০৭৮, গাজীপুর-থ-১২-১১৮৮, গাজীপুর-থ-১১-৫৯২৯, গাজীপুর-থ-১২-২৪৯০ নম্বরের গাড়িগুলোর মালিকানা পরিবর্তনে সরাসরি ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘুষ বাণিজ্যের মূলহোতা হিসেবে উঠে এসেছে বিআরটিএর মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ারের নাম। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরাসরি গ্রাহকদের হয়রানি করেন এবং দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল বিআরটিএ অফিস থেকে বদলি হয়ে গাজীপুরে আসার পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বিআরটিএর আলোচিত কর্মকর্তা মাসুদের আত্মীয় হওয়ায় তিনি যেখানে যান, সেখানেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতি চালিয়ে যান।

টাঙ্গাইলে থাকাকালীন গোলাম সারোয়ার মোটরযান পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) দায়িত্ব পালন করেন। যদিও তার পদের সঙ্গে এ দায়িত্বের সম্পর্ক নেই। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলার আসামি আলতাব হোসেনের সঙ্গে মিলে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আলতাব হোসেনের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা হয় এবং আরও পৌনে তিন কোটি টাকার সম্পদ গোপনের অভিযোগে দুদক পৃথক মামলা করে। রহস্যজনক কারণে গোলাম সারোয়ার তখন রেহাই পেয়ে যান।

সম্প্রতি একটি গোপন ভিডিওতে দেখা যায়, গাজীপুরের রাজবাড়ী মাঠে ফিটনেস করতে আসা গাড়ির ছবি তুলতে যান গোলাম সারোয়ার। তার সঙ্গে ছিলেন দালাল জিন্নাত। সেখানে উপস্থিত একাধিক গ্রাহক জানান, দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিলে সহজে কাজ হয়ে যায়, তাই তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়েই ঝামেলা এড়ান।

বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই এসব দুর্নীতি চলছে; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। একাধিক সূত্র জানায়, অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে (এডি) ম্যানেজ করেই গোলাম সারোয়ার এই ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’ পরে তিনি এডির সঙ্গে কথা বলতে বলেন এবং এই প্রতিবেদককে চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ জানান।

অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে একাধিকবার ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।