ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ বিক্ষোভের মুখে বিরত রাখা হচ্ছে

অক্টোবর ১৭, ২০২৪
আইন-আদালত
হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ বিক্ষোভের মুখে বিরত রাখা হচ্ছে

‘দলবাজ’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ অথবা তাঁদের অপসারণের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও এবং বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ ও জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং আলাদাভাবে গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে। এই কর্মসূচির ঘোষণা আগের দিন মঙ্গলবার দেওয়া হয়েছিল। গতকালের বিক্ষোভকালে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও নাগরিক কমিটির লোকেরা উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিরা আওয়ামী লীগের ইচ্ছা ও নির্দেশনাকে আইনে পরিণত করেছিলেন। বিচারাঙ্গনকে দলীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তাঁদের নিয়োগ দিয়েছিল। এই বিচারপতিদের দলবাজির কারণেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যার সাহস দেখিয়েছেন। এই বিচারপতিরা ফ্যাসিস্টের দোসর।

দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। শুরুতে বিক্ষোভ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একটি দল, যাঁরা মূলত বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিতি। তাঁদের ব্যানার ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ’।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এসে বিক্ষোভ শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে তারা জড়ো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে কয়েক শ শিক্ষার্থী যান সুপ্রিম কোর্ট এলাকায়। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইংয়ের ব্যানারে একদল বিক্ষোভকারী দুপুর ১২টার কিছু পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিক্ষোভকালে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘আইনজীবী-জনতা, গড়ে তোলো একতা’, ‘দফা এক দাবি এক, দলবাজদের পদত্যাগ’, ‘ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আবু সাঈদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দফা এক দাবি এক, দুর্নীতিবাজদের পদত্যাগ’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’।

বিক্ষোভ চলাকালে নিজেদের দাবি নিয়ে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আদালতে মামলার রায়ের জন্য কোটি টাকা লেনদেন হয়। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে টাকার বিনিময়ে আসামি খালাস করা বন্ধ করুন। এসব বন্ধ না হলে যেখানেই অভিযোগ পাব, সেখানেই আমরা চলে যাব।’ তিনি বলেন, দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের কোনো স্থান আদালতে হবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিবাদের যাঁরা দোসর ছিলেন, তাঁদের দ্বারা আওয়ামী খুনি ও সন্ত্রাসীদের বিচার করা সম্ভব নয়।

বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের অনেকেই হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তাঁরা বলেন, রাষ্ট্রের ভঙ্গুর অবস্থার জন্য দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিরাও দায়ী। এই বিচারপতিরা আওয়ামী লীগের নির্দেশ ও ইচ্ছাকে আইনে পরিণত করেছেন। এঁদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পদত্যাগ করেননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘দলবাজ’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ করতে প্রথমে বেলা দুইটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর তা এক ঘণ্টা বাড়িয়ে বেলা তিনটা করা হয়। একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। বিকেল চারটার দিকে আজিজ আহমদ ভূঞা বিক্ষোভকারীদের জানান, ১২ জন বিচারপতিকে বেঞ্চ দেওয়া হবে না।

বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের অনেকেই হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তাঁরা বলেন, রাষ্ট্রের ভঙ্গুর অবস্থার জন্য দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিরাও দায়ী। এই বিচারপতিরা আওয়ামী লীগের নির্দেশ ও ইচ্ছাকে আইনে পরিণত করেছেন। এঁদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পদত্যাগ করেননি।