নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় মার্বেল খেলা নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে এক কিশোরকে হত্যার পাঁচ মাসের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃতের নাম রাসেল আহমেদ সোয়াদ (২১)। বৃহস্পতিবার বিকালে এসব পিবিআইয়ের গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, সোয়াদকে গত ১০ জানুয়ারি নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হলে সোয়াদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দেয়। এতে সে হত্যার কারণ, আর কারা জড়িত ও ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করেছে।
পিবিআইয়ের দাবি, নিহত বকুলের বাবা পেশায় রিকশা চালক। আর মা মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় ভ্যালমন্ড ফ্যাশনে সুইং অপারেটর হিসাবে চাকরি করেন। তারা গত বছরের ২৪ জুলাই কাজ শেষে বাড়ী ফিরে বিকালে বড় ছেলে বকুলকে বাসায় এসে পায়নি। রাত গভীর হওয়ার পরও বকুল বাসায় ফিরে না আসায় আশপাশের বাসাসহ তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাসায় খোঁজাখুজি করেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরের দিন ২৫ জুলাই সকালে প্রতিবেশী মোসা. ফরিদা বেগম তাদের জানায়, ভোগড়া পেয়ারা বাগান গ্রামের বালুর মাঠের সামনে মো. সিদ্দিকের পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরের ভেতরে ১৪ থেকে ১৫ বছরের একটি ছেলের লাশ পড়ে আছে। পরে তারা সেখানে গিয়ে লাশটি দেখে তাদের ছেলে বকুলের লাশ বলে সনাক্ত করেন। খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বকুলের লাশ উদ্ধার করে। লাশের ডান চোঁখের উপরে কালো ও ছোলা জখমের চিহ্ন এবং নাক দিয়ে রক্ত নির্গত হওয়ার চিহ্ন দেখা যায়।
পরে এ ঘটনায় নিহত বকুলের বাবা বাদী হয়ে বাসন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাায় বলা হয়, গত ২৪ জুলাই সকাল থেকে ২৫ জুলাই সকাল অনুমান ৯টার মধ্যে যে কোনো সময় অজ্ঞাতনামা খুনিরা অজ্ঞাত কারণে বাদীর ছেলেকে হত্যা করে মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে বকুলের লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, বাসন থানা পুলিশ তদন্ত করে মামলার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ সদর দপ্তরমামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই করে রাসেল আহম্মেদ সোয়াদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনি হত্যার কারণ ও জড়িতদের নাম জানায়। গ্রেপ্তারকৃত সোয়াদ বাসন থানার বালু মাঠের কোনায় চা-স্টলে চা খাওয়ার সময় তাঁর পরিচিত একই এলাকার ছোট ভাই বকুল ও নাঈম বালুর মাঠে বাজিতে মার্বেল খেলছিলো। খেলা নিয়ে নাঈম আর বকুল ঝগড়া ও মারামারি করে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে বকুল নাঈমকে চড় থাপ্পর ও জোরে ধাক্কা মারে। এতে নাঈম মাটিতে পড়ে যায়। ঝগড়া দেখে এলাকার এক বড় ভাই উভয়কে ফিরিয়ে দেয়। নাঈম রাগ করে সেখান থেকে চলে যায়। পরে বিকালে সোয়াদ, নাঈম, নাজমুল ও তার এক বন্ধু একসাথে আড্ডা দেয় এবং গাঁজা সেবন করে। এ সময় বকুলেল বিরূদ্ধে নাঈম নাজমুলের কাছে নালিশ দেয়।
ওই নালিশের রেশ ধরে আসামিরা বকুলকে ধরে এনে বালুর মাঠের দক্ষিণে একদম শেষ কর্ণারের টিনের ঘরের ভেতরে বকুলের হাত, পা ও মুখ আটকে রাখে। পরে রাত নয়টার দিকে তারা বকুলকে স্বাসরোধে হত্য করে। এসময় নাঈম বকুলকে লাথি ঘুষি মারে। নাজমুলও কয়েকটি লাথি ঘুষি মারে। সোয়াদ নিজেও হুজুগে কয়েকটা লাথি, ঘুষি মারে। সোয়াদ বকুলের পা চেপে ধরে। নাজমুলের একটি ঘুষি বকুলের ডান চোখের উপরে লাগলে চোখ ফুলে যায়। নাজমুল ও নাঈমদের ঘুষিতে বকুলের নাক ফেটে রক্ত বের হয়। নাঈম বকুলের গলা মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে চার থেকে পাঁচন মিনিট পরে বকুল নিস্তেজ হয়ে যায়। বকুল মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে সোয়াদ বকুলের ডান পায়ে, নাঈম বাম পায়ে, নাজমুল বকুলের মাথার নীচে এক হাতে, আরেক হাতে বাম হাত এবং অপর একজন বকুলের ডান হাতে ধরে তার লাশ পাশের ফ্যাক্টরীর জমানো পানিতে ফেলে দেয়। পরে সকলেই যার যার বাসায় চলে যায়।
নিহত বকুল গাজীপুরের বাসন থানার ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার আবুল কালামের বাড়ীর ভাড়াটিয়া সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে।
এনডিটিভিবিডি/১১জানুয়ারি/এএ