নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণার জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। গত ৫ আগস্ট সংঘটিত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি স্থায়ীরূপে সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবনটির সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

দেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতি এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

১৯০৮ সালে তৈরি করা অনন্য এ স্থাপনার নির্মাণশৈলীতে মুঘল ও ইউরোপীয় ধ্রুপদি স্থাপত্যরীতির মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবন। সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে অক্ষুণ্ন রেখে এটি সংরক্ষণ করা হলে তা জনমানসে এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই স্থাপনার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হবে।

প্রধান বিচারপতি মনে করেন, ঞযব অহঃরয়ঁরঃরবং অপঃ, ১৯৬৮ বিধান প্রয়োগের মাধ্যমে বাসভবনটির মালিকানা ও ব্যবহার স্বত্ব সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে অক্ষুণ্ন রেখে দৃষ্টিনন্দন ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি সংরক্ষণ করা হলে স্থাপনাটি একটি জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই স্থাপনার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ সভা হয়। এতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলমসহ ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ৬ অক্টোবর ঐতিহাসিক এই স্থাপনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে পত্র চিঠি দেওয়া হয়।

গত ৯ অক্টোবর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯ হেয়ার রোডস্থ প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করার কার্যক্রম গ্রহণের অংশ হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রত্নতত্ত্ব) মো. আমিরুজ্জামানের সই করা পত্রে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালককে প্রধান বিচারপতির বাসভবন সরজমিন পরিদর্শন-পূর্বক সচিত্র প্রতিবেদন প্রস্তুতক্রমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে প্রেরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী ঢাকাতে স্থানান্তরিত হলে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য যেসব আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল তার মধ্যে ১৯ হেয়ার রোডস্থ প্রধান বিচারপতির বাসভবন অন্যতম। ১৯০৮ সালে নির্মিত অনন্য এ স্থাপনার নির্মাণশৈলীতে মুঘল ও ইউরোপীয় ধ্রুপদি স্থাপত্যরীতির মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যাওয়ার পর এই ভবনটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলেও ১৯৫০ এর দশকের শুরু থেকে ভবনটি প্রধান বিচারপতির বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শতবর্ষী এ স্থাপনাটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হলে ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এর ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্থাপনাটির গুরুত্ব ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এনডিটিভিবিডি/১৩অক্টোবর/এএ