নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্য বিরোধী সার্ভে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেছেন, সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থায় ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) ডিগ্রীধারী সার্ভেয়ার/সমমান পদে কর্মরতদের অন্যান্য সকল ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদের ন্যায় বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে হবে।
সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মৌলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনের বৈষম্যের স্বীকার সার্ভে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সার্ভেয়িং ডিপ্লোমাধারীগণ ডিজিটাল ভূমি অরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি অধিগ্রহণ, সড়ক, মহাসড়ক, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণসহ সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারের সকল উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারিগর হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে গার্ভেয়ার/সমমানের পদে কর্মরত থেকে সার্ভে ডিপ্লোমা প্রকৌশল্পীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৮৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাঃশাঃ৫/১০এম- ২/৮৯/১৭৮/১(১৭) নম্বর স্মারকের প্রজ্ঞাপনমূলে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে তাঁদর অধীনস্থ অফিসসমূহে অন্যান্য সকল ডিপ্লোমার ন্যায় তিন বছর (বর্তমান চার বছর) মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-সার্ভেয়িং টেকনোলজিকে সমবেতন স্কেল ও পদ-মর্যাদা প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ১৯ নভেম্বর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ১৬৪ নম্বর প্রজ্ঞাপনের এবং ১৯৯৪ সালের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটে সরকারের সকল ন্ত্রণালয়/বিভাগকে তাঁহাদের অধীনস্থ অফিসসমূহে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের পদে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমাধারীদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ করা হলেও সার্ভেয়িং ডিপ্লোমাধারীদের জন্য নির্ধারিত সার্ভেয়ার/সমমানের পদে সরকার নির্ধারিত গ্রেডের কয়েক ধাপ নীচে ১৪/১৫/১৬ গ্রেডে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। ২০০৬ সালের ১৬ মার্চ স্মারক নম্বর কাশিঅ/বিবিধ/পার্ট-২/১৫২০/২০০২/৭১ মূলে মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) টেকনোলজি পাশকৃতদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল অন্যান্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যায় বৃদ্ধির সুপারিশ করলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) এ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্নগণ সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ১৯৯৪ সালের ১৯. নভেম্বর সম (বিধি-২) পদোন্নতি-২৭/৯৪-১৬৪ নম্বর স্মারকের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধায়া তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদা প্রদান এবং বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার জন্য সুপারিশ করা হলেও আজও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০১৮ অনুযায়ী চার বছর মেয়াদি সকল ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাশকৃতদের চাকরি/ দক্ষতার শ্রেণী করণে মধ্যম নারী ব্যবস্থাপক/সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার/সমতুল্য হিসেবে বলা হলেও সার্ভেয়িং ডিপ্লোমাধারীদের দ্বিতীয় শ্রেণিয় মর্যাদা দেয়া হচ্ছে না। যা বাংলাদেশ কারিগরি শক্ষা বোর্ড আইন, ২০১৮ এর সুস্পষ্ট লংঘন, কারিগরি শিক্ষার অবমূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচারণ। ২০১৯ সালেল ১৪ ফেব্রুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-২ (মাঠ প্রশাসন), ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব প্রশাসনে সার্ভেয়ার/সমমানের পদে কর্মরত সার্ভে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অন্যান্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মত ১০ম গ্রেডে বেতন ফেল বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন-১ শাখা ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) টেকনোলজি ডিগ্রীধারীদের ১০ম গ্রেডে বেতন স্কেল দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ সচিবের কাছে সুপারিশসহ পত্র দেওয়া হলেও ওই সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নে কালক্ষেপন করে সার্ভে ডিপ্লোমাধারীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সান্নিধ্যে থেকে বাস্তবমুখী কারিগরি শিক্ষার গুরত্ব বাড়তে থাকলেও দেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম সার্ভেয়িং টেকনোলজির ডিপ্লোমাধারীগণের ব্যাপারে বিগত সরকারের উদাসিনতা অত্যন্ত দুঃখজনক। একই কারিকুলামে পড়াশোনা করেও সার্ভে ডিপ্লোমাধারীরা কেনো বৈষম্যের স্বীকার হবে?
মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, বৈষম্য নিরসনে ১৯৯৪ সালের ১৯ নভেম্বর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ১৬৪ নম্বর প্রজ্ঞাপন এবং ১৯৯৪ সালের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের আলোকে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থায় ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) ডিগ্রীধারী সার্ভেয়ার/সমমান পদে কর্মরতদের অন্যান্য সকল ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদের ন্যায় বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন করার দাবিতে আমাদের দীর্ঘ দিন আন্দোলন, সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ৬৪ জেলার প্রশাসকের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন সংস্থা/দপ্তর প্রধানগণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বারবার তাগিদ প্রদান করা স্বত্বেও আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশলের কারণে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে অন্যান্য সকল ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ন্যায় ডিপ্লোমা-ইন- ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) পাশকৃতদের সার্ভেয়ার/সমমান পদে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থায় কর্মরতদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে/ দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত করার জন্য ১৯৯৪ সালের ১৯ নভেম্বর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ১৬৪ নম্বর প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের তথা পুনরায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বেতন- বৈষম্য দূরীকরণের দাবী জানাচ্ছি।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যে আমাদের অধিকার ১০ গ্রেড বেতন না হলে ফেল বাস্তবায়ন"বৈষম্য বিরোধী সার্ভে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ছাত্র-পেশাজীবি অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ" আগামী ১ লা অক্টোবর থেকে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দিবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ নাইমুল ইসলাম মোহাম্মদ আরিফ হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
এনডিটিভিবিডি/১৭সেপ্টেম্বর/এএ