নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় অস্থায়ী পশুর হাটে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাপারীরা দাম কমিয়েও গরু বিক্রি করতে পারছেন না। বিশেষ করে বড় গরুর ক্রেতা মিলছে না। ফলে হাটটিতে অবস্থান করা বেশিরভাগ ব্যাপারীর মুখে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে।
শুক্রবার বিকালে মেরুল বাড্ডা হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকজন গরু দেখতে এসেছেন। হাটে অবস্থান করা বেশিরভাগই ব্যাপারীর লোক অথবা হাটের লোক। ক্রেতা ও দর্শনার্থী না থাকায় ব্যাপারীরা অলস সময় পার করছেন।
ব্যাপারী ও হাট ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার হাটটিতে খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় গরুর দাম বেশ কম ছিল। বৃহস্পতিবার বিক্রি ভালো হওয়ায় আজ শুক্রবার সকালে কেউ কেউ নতুন করে গরু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু সকাল থেকে ক্রেতাদের দেখা তেমন মিলছে না।
ক্রেতা সংকটের কারণে কেউ কেউ কম দামে গরু বিক্রির চেষ্টা করেও সফল হচ্ছেন না। এমনকি বড় গরু গতকাল ক্রেতারা যে দাম দিতে চেয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশ দাম কমিয়েও বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছু ছোট গরু দাম কমিয়ে বিক্রি করতে পারছেন ব্যাপারীরা।
নড়াইল থেকে ১২টি গরু নিয়ে এসেছিলেন কিসলু মুন্সী। এর মধ্যে ছোট ১০টি গরু গতকাল বিক্রি হয়েছে। তবে বড় দুটি গরু শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেননি। এর মধ্যে একটি বড় গরুর দাম গতকাল একজন তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা বলেছিলেন, কিন্তু সেই দাম পছন্দ না হওয়ায় বিক্রি করেননি তিনি। অথচ আজ গরুটির দাম কেউ তিন লাখও বলছেন না। একজন সর্বোচ্চ দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা বলেছেন।
এ নিয়ে কিছুটা হতাশার সুরে কিসলু মুন্সী বলেন, নড়াইলে আমার খামার আছে। এই হাটে ১২টি গরু এনেছিলাম। ছোট ১০টি গরু গতকালই বিক্রি হয়ে গেছে। ওই গরুগুলোর দাম ভালোই পেয়েছি। কিন্তু বড় দুটি বিক্রি করতে পারিনি। সবচেয়ে বড়টির দাম গতকাল একজন তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা বলেছিলেন, তখন বিক্রি না করে ভুল করেছি মনে হচ্ছে। আজ দুজন দাম করেছেন, দুজনই তিন লাখ টাকার কম বলেছেন। এই দামে বিক্রি করলে তো লোকসান হবে। লোকসানে বিক্রি করা তো আর সম্ভব না।
তিনি বলেন, এই গরুর মাংস হবে কমপক্ষে ১১ মণ। জবাই করে মাংস বিক্রি করলেও তিন লাখ টাকার বেশি পাওয়া যাবে। তাহলে আমি তিন লাখ টাকার কমে বিক্রি করি কীভাবে বলেন। বাজার এভাবে পড়ে যাবে বুঝতে পারিনি। আমার ধারণা ছিল চার লাখ টাকা দাম পাবো। কিন্তু কপাল খারাপ, যে কারণে গতকাল বিক্রি না করে আজ ধরা খেয়ে গেলাম। এখন বিক্রি না হলে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।
এ সময় পাশে থাকা হাট তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা মো. সাইফুল নামের একজন বলেন, গতকাল একজন গরুর দাম তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা বলেছেন। আমরা হাটের লোক ওনাকে বলেছিলাম বিক্রি করে দেন। কিন্তু আরও লাভের আশায় তখন বিক্রি করেননি, এখন ধরা খেয়ে গেলেন। আজ সকাল থেকেই হাটে ক্রেতা খুব কম। এই গরু আর বিক্রি হবে বলে তো মনে হচ্ছে না।
কিসলু মুন্সীর মতো হাটে গরু নিয়ে চিন্তায় আছেন বগুড়া থেকে ১২টি গরু নিয়ে আসা কামরুল। তিনি বলেন, রাস্তায় প্রচুর যানজট, তাই হাটে গরু আনতে দেরি হয়ে গেছে। আজ সকালে হাটে এসে পৌঁছেছি। সকাল থেকে বিকেল হয়ে গেছে কিন্তু ১২ গরুর একটিও বিক্রি করতে পারিনি। কয়েকজন এসে দরদাম করে গেছেন, কিন্তু যে দাম বলে তাতে তো খরচের টাকাও উঠবে না। তাই বিক্রি করিনি।
তিনি বলেন, গরুর হাট এত নরম যাবে (দাম কমে যাওয়া) বুঝতেই পারিনি। বুঝতে পারলে তো ঢাকায় গরু আনতাম না। এলাকা থেকে যে দামে আমরা কিনেছি, ঢাকার মানুষ সেই দামও বলছে না। এখন হাটে গরু এনে তো মনে হচ্ছে বিপাকে পড়ে গেলাম।
এদিকে এই প্রতিবেদকের সামনেই হাটটিতে একটি গরু এক লাখ ৪৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। গরুটির ক্রেতা ও বিক্রেতা অনেক সময় ধরে দর কষাকষির পর বিক্রি সম্পন্ন হয়। তবে গরুটির দাম গতকাল তিনজন এক লাখ ৭০ হাজার টাকা বলেছিলেন বলে দাবি বিক্রেতা আবুল হোসেনের।
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা আবুল হোসেন বলেন, আমরা তিনজন হাটে ছয়টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। অন্য দুজনের চারটি গরু গতকাল বিক্রি হয়ে গেছে। আমার দুটি বিক্রি করতে পারিনি। আজ একটি বিক্রি করলাম। কিন্তু গতকাল বিক্রি না করে আজ ২৭ হাজার টাকা লস হলো। কারণ গতকাল এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দাম উঠেছিল। আজ সেই গরু এক লাখ ৪৩ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম।
তিনি বলেন, আজ সকাল থেকেই হাটে ক্রেতা নেই। ক্রেতা না থাকায় হুট করে গরুর দাম পড়ে গেছে। যারা হাটে আসছেন, তারা এমন দাম বলছেন শুনে আমরাই অবাক হচ্ছি। এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় যে গরু বিক্রি করিনি, আসে সেই গরুর দাম কেউ কেউ এক লাখ ২০ হাজার টাকাও বলেছে। অনেক কষ্ট করে শেষমেষ এক লাখ ৪৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আর যে গরুটি আছে, ওটির মোটামুটি দাম পেলেই বিক্রি করে দেবো। আর কোনোদিন ঢাকায় গরু নিয়ে আসবো না।
এনডিটিভিবিডি/০৬জুন/এএ