ডেস্ক রিপোর্ট: ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন এবং দিবসটিতে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদ আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে এ দাবি জানান তিনি। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে সরকারি ছুটি পুনর্বহালের দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন এবং রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করতে হবে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা যেভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছেন, সেভাবে গণতান্ত্রিক দিবসগুলোকেও দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা সবসময় চক্রান্তের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং তাদের হাতেই বারবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারাই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে নস্যাৎ করেছে। তারা সবসময় চায় সরকার পরিচালনার মাধ্যমে একটি বিশেষ দেশের পলিসি বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু বার বার এ দেশের মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে তাদের চক্রান্তকে প্রতিহত করেছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন '৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কীভাবে ভারতের এজেন্টরা এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। অবশেষে ৭ নভেম্বর এ দেশের সিপাহী-জনতা সেই চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং তাদের চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেয়। এ কারণে দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর পরিকল্পিতভাবে ঐতিহাসিক দিনগুলোকে জনগণের দৃষ্টির অন্তরালে নিয়ে যান। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, তারা ৭ নভেম্বরকে পূর্বের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এতে দেশের জনগণ যেমন আওয়ামী চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন হবে, তেমনি দেশের গণতন্ত্র ও তাদের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত থাকবে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা মো. রমীজ উদ্দিন রুমি’র সভাপতিত্বে এবং আরাফাত রহমান আবির এর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন ভিপি ইব্রাহীম, অ্যাড. মো. রবিউল ইসলাম রবি, এম. জাহাঙ্গীর আলম, যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস.এম মিজানুর রহমান, প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজী, জাগ্রত বাংলাদেশ’র সভাপতি ও দৈনিক খোলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক- প্রকাশক মো. জহিরুল ইসলাম কলিম, জাগ্রত বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীন, প্রতিবাদ’র সভাপতি মো. ইব্রাহীম হোসেন, মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।
বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতা ফারুক বলেন, আপনারা দ্রুত নির্বাচন দিন। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচিত সরকারের খুব প্রয়োজন। আমরা কখনোই ২০১৪ সালের মতো ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে চাই না, অথবা ২০১৮ সালের নৈশকালীন নির্বাচনের মতো অনির্বাচিতভাবে জয়যুক্ত হতে চাই না। আমরা চাই, ভোটবঞ্চিত জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রিয় ব্যক্তিদের নির্বাচিত করুক এবং তাদের নির্বাচিত যোগ্য ব্যক্তিরা দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করুক।
তিনি আরও বলেন, ৭ নভেম্বরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তিনি দ্রুত বাংলার মানুষকে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দেন। শহীদ জিয়া দেশের মানুষকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেন। ৭ নভেম্বর পালনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থেই জিয়াকে স্মরণ করা হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আপনার পতন হয়েছে। আপনার বাবা বাংলাদেশকে বলতেন ‘আমার দেশ’, আর আপনি বলতেন ‘আমার বাবার দেশ’। অথচ একটা স্বাধীন দেশকে আপনারা আরেক দেশের তাবেদার বানানোর সকল চক্রান্ত সম্পন্ন করেছেন। দেশের মানুষ আপনার চক্রান্ত বুঝে ফেলেছে। আপনাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, আপনি দিল্লীর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছেন। আপনার অশুভ প্রেতাত্মারা এখনো বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত থেকে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের জানা উচিত- দেশের সচেতন জনতা সোচ্চার আছে। তাদের চক্রান্ত কখনোই সফল হবে না।
বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, ৭ নভেম্বরের মতো ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে। তাহলে দেশের মানুষ দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের সম্পর্কে জানতে পারবে এবং স্বৈরাচারীদের ব্যাপারে সতর্ক ও সোচ্চার থাকবে।
এনডিটিভি/এলএ