ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দায়ের করা মামলায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিশর। দক্ষিণ আফ্রিকার করা ওই মামলায় গাজা উপত্যকায় গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে ইসরায়েলকে তার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে মিশর বলেছে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মিশর এমন সময়ে এই পদক্ষেপের কথা জানাল— যখন কাতার ও মিশরের মধ্যস্ততায় কয়েক দফা আলোচনা হয়েও হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইসরায়েলের অনমনীয় ও অপেশাদার আচরণের কারণেই ক্ষোভের বহিৎপ্রকাশ ঘটিয়েছে মিশর।
ইসরায়েলের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে মিশরের সঙ্গে বৈরিতা হোক তা কোনোভাবেই চাইছে না এমন অবস্থায় মিশরের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য কঠোর কূটনৈতিক বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মিশরের এই ঘোষণার পর ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিচালক অ্যালন লিয়েল এক প্রতিক্রিয়ায় আল জাজিরাকে বলেন, এই পদক্ষেপটি ইসরায়েলের জন্য একটি ‘অবিশ্বাস্য কূটনৈতিক আঘাত’।
অ্যালন লিয়েল বলেন, ‘মিসর মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের অবস্থানের ভিত্তিপ্রস্তর। জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মরক্কো সহ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় আজ ইসরায়েলের যে সংযোগ রয়েছে, তার সবই ৪০ বছর আগে মিশর যা করেছিল তার ফল।’
‘সুতরাং দ্য হেগের আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মিশর যোগদানের ঘোষণা একটি সত্যিকারের কূটনৈতিক ধাক্কা। ইসরায়েলকে বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে’ বলেন অ্যালন লিয়েল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাবেক এই পরিচালক আরও বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি সতর্ক করে দিয়েছি। এটা বিভিন্ন দিক থেকে আসছে, ইসরায়েলকে... বিশ্বকে শুনতে হবে। আমাদের সামগ্রিকভাবে ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার দিকে তাকাতে হবে, শুধু গাজায় আগামী কয়েক সপ্তাহে নয়।’
বিবৃতিতে, মিশর গাজা উপত্যকায় একটি যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এবং রাফাহতে সামরিক অভিযান বন্ধ করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদানের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক দলগুলোর কাছে তার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘এমন মধ্যপন্থী প্রস্তাব রয়েছে যা উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য পূরণ করে যা অনুমোদন করা উচিত। যার মাধ্যমে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, জিম্মি-বন্দিদের অদলবদল চুক্তি, কঠিন মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং বাস্তুচ্যুতির ধারাবাহিকতা রোধ করা যায়।
মিশরীয় সফররত স্লোভেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তানজা ফাজনের সঙ্গে বৈঠকের পর রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে স্লোভেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তানজা ফাজন বলেন, রাফাহতে আরও উত্তেজনা রোধ করতে এবং সীমান্ত ক্রসিংগুলি পুনরায় চালু করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার স্লোভেনিয়ান সরকার গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলবারের বরাতে তিনি বলেন, ‘তার দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চায়।’
এনডিটিভি/পিআর