ঢাকা , রবিবার, জানুয়ারী ৫, ২০২৫

আরও তীব্র হলো গ্যাস সংকট

জানুয়ারী ০২, ২০২৫
জাতীয়
আরও তীব্র হলো গ্যাস সংকট

ডেস্ক রিপোর্ট: গ্যাস সংকট নিয়ে চলমান ভোগান্তির মধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেল একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট বা টার্মিনাল। গতকাল বুধবার সকালে বন্ধ হয়ে যায় টার্মিনালটির কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। এরই মধ্যে শিল্পকারখানা, দোকানপাট ও আবাসিক খাতের অনেক এলাকায় গ্যাস সরবরাহ নেমেছে শূন্যের কোটায়। আবার কোনো কোনো এলাকায় সরবরাহ থাকলেও গ্যাসের চাপ ছিল বেশ কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতকাল এলেই দেশে গ্যাসের সংকট তৈরি হয়। পাইপলাইনে কনডেন্সড জমে গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশে গ্যাস উৎপাদন হ্রাস, ডলার সংকটে এলএনজি আমদানি না হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে দেশে গ্যাসের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেইসঙ্গে একটি টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সংকট আরও বেড়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দুটি টার্মিনালের একটি শিডিউল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চার দিন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে এলএনজি সরবরাহ কমে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের সংকট কিছুটা বাড়বে। পরিকল্পনা অনুসারে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশে কাজ চলছে।

গত মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে পেট্রোবাংলা ১ জানুয়ারি থেকে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি মেরামত কাজের জন্য চার দিন বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছিল। এতে প্রতিদিন গ্যাসের সরবরাহ আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমবে। অর্থাৎ অপর টার্মিনাল সামিটের সর্বোচ্চ সরবরাহেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।

শিল্প খাতে গ্যাস সংকট বা চাপ কমের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সারা বছরই এই সংকট কম-বেশি লেগে থাকে। অনেকের মতে, বছরের অন্যান্য সময় গ্যাসের সংকট থাকলেও শীত মৌসুমে শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ কিছু উন্নতি হয়।

এর কারণ বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়া। শীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়। এই বাড়তি গ্যাস সরবরাহ করা হয় শিল্প খাতে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেমন গ্যাস লাগছে না। সার উৎপাদনের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এর ওপর এখন এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হয়ে গেল। সার্বিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিল্প খাতে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে জ্বালানি তেল দিয়ে কারখানা চালাতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি মধ্যম মানের কারখানায় প্রতিদিন ব্যবহার করতে হচ্ছে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকার বাড়তি ডিজেল। আর প্রথম সারির কারখানায় এর পরিমাণ প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। কিন্তু অনেক কারখানার মালিকের বিপুল পরিমাণ ডিজেল কেনার সামর্থ্য নেই।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে বলেন, গ্যাস সংকট পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। গোটা নারায়াণগঞ্জে গ্যাস নেই। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার উত্তর অংশসহ আশুলিয়া, সাভার, জয়দেবপুর, সফিপুর, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী, টাঙ্গাইল, এলেঙ্গা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও এর আশপাশে গ্যাস সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। হঠাৎ এসব অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ প্রতি বর্গইঞ্চিতে ২-৩ পাউন্ডে (পিএসআই) নেমে এসেছে। এখানে উল্লেখ্য, সাধারণত জেনারেটর বা বয়লার চালানোর জন্য পোশাক কারখানাগুলোয় ১৫ পিএসআই চাপের গ্যাস প্রয়োজন। এ অবস্থায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকার বাইরের অবস্থা আরও নাজুক বলে জানান তারা।

এদিকে শিল্পকারখানার মতো আবাসিকেও গ্যাস সংকট তীব্র হচ্ছে। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ না পেয়ে আবাসিক গ্রাহকরা পড়েছেন বেশি ভোগান্তিতে। সামর্থ্যবান অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করছেন। এতে জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে। রাজধানীর মহাখালী, পল্লবী, কাফরুল, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০, রায়েরবাগ, গ্রিনরোড, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, বাসাবো, আরামবাগ, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তাগোলা ও উত্তরা এলাকায় এই সংকটের খবর পাওয়া গেছে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার প্রায় ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে পাওয়া গেছে ১ হাজার ১৭১ দশমিক এক মিলিয়ন ঘনফুট, আর এলএনজি থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।