সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের পর এবার কুমিরের আক্রমণের শিকার হলেন বনজীবী আব্দুল কুদ্দুস (৫৫)। সঙ্গীদের প্রচেষ্টায় নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ফিরে এলেন সুন্দরবনের এই মৌয়াল।
আবদুল কুদ্দুসকে কুমিরের হাত থেকে জীবিত উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন তারই ছোট ভাই আবদুল হালিম। ঘটনাটি ঘটে গত ১১ মে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে।
আব্দুল হালিম বলেন, গত শুক্রবার (১০ মে) মধু সংগ্রহের জন্য সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে ছয় সদস্যের একটি দল সুন্দরবনে যান। বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করতে করতে সন্ধ্যার দিকে কালাগাছী এলাকায় পৌঁছান তারা। পর দিন শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর নৌকা থেকে নামেন তারা। কাজ শেষ করে দুপুর আড়াইটার দিকে কলাগাছী নদীর চরে গোসল করছিলেন কুদ্দুসসহ পাঁচজন। এ সময় হঠাৎ একটি কুমির ভাইকে আক্রমণ করে। বাঁ হাত কামড়ে তাকে নদীতে নিয়ে যায় কুমিরটি। এ সময় নদীর পানিতে রক্ত ভেসে উঠতে দেখেন সবাই।
আব্দুল হালিম বলেন, এক পর্যায়ে তারা বুঝতে পারেন কুদ্দুসকে কুমিরে ধরেছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা লাঠি, পাতিল আর নৌকার বৈঠা দিয়ে পানিতে শব্দ করার পাশাপাশি কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করেন। তিন-চার মিনিট পর শিকার ছেড়ে নদীর গভীরে চলে যায় কুমিরটি। পরে কুদ্দুসকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলা হয়। শনিবার এ ঘটনার পর ঝড়ো বাতাসের কারণে তাদের বাড়ি ফিরতে সোমবার সন্ধ্যা হয়ে যায়।
আবদুল কুদ্দুস জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ সানার ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আবদুস কুদ্দুস বলেন, একদিকে কুমির, অন্যদিকে সঙ্গীরা। টানাটানির একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ভাই আবদুল হালিমসহ অন্য সঙ্গীদের চেষ্টায় ফিরে আসতে পেরেছি।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন তিনি। সেবারও সঙ্গীদের চেষ্টায় ফিরে আসতে পেরেছিলেন। এর আগে ২০০৮ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন তার দলে থাকা দাতিনাখালী গ্রামের গোলাম মোস্তফা।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে মৌয়ালদের সতর্ক করা হয়। বৈধভাবে সুন্দরবনে গিয়ে বন্যপ্রাণীর শিকার হয়ে হতাহত হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে।
এনডিটিভি/পিআর