ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম প্রস্তাবিত বাজেট (২০২৪-২৫) উত্থাপিত হয়েছে জাতীয় সংসদে। নির্বাচনের আগে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র ইশতেহার দিয়েছিল দলটি। নতুন অর্থবছরের বাজেটেও বলা হয়েছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’। দেশের অর্থনীতির অবস্থা এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বর্তমান সংকট কাটিয়ে এই বাজেট স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, সময়োপযোগী, গণমুখী ও কৌশলী বাজেট দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এই বাজেট নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রতিক্রিয়া আসেনি।
তবে একান্ত আলাপচারিতায় দলটির কয়েকজন নেতা বলেন, দেশের অর্থনীতির ওপরের চাপ কমাতে সহায়ক হবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে উঠতে বাস্তবসম্মত, গণমুখী ও কৌশলী বাজেট হয়েছে এবার। এই বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা সম্ভব হবে এবং অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়াতে পথ মসৃণ করবে। নতুন সরকারের সামনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে এই বাজেট।
বাজেট উপস্থাপন শেষে জাতীয় সংসদের টানেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংকটের এই সময়ে গণমুখী বাজেট হয়েছে। দলের নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে৷ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও ফোকাসটা থাকবে। বাস্তবসম্মত হয়েছে এই বাজেট।
বাজেট প্রণয়নে আইএমএফের কোনও প্রেসক্রিপশন মানা হয়েছে কিনা—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও প্রেসক্রিপশন মেনে বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কারও প্রেসক্রিপশন মেনে চলে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত ও কৌশলী হয়েছে। নতুন সরকারের প্রথম বাজেট এটি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বাজেট। গরিবের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমবে। বাজেটটা সুন্দর করে দেওয়া হয়েছে।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট গণমুখী, উৎপাদনমুখী ও বাস্তবায়নযোগ্য হয়েছে। সময়োপযোগী এই বাজেট সরকারের সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার লুটেরায় পরিণত হয়েছে। লুটেরাদের বাজেট হবে কেন? লুট করার জন্য। আমি দেখতে পাচ্ছি আবারও লুট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তথাকথিত যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, এই বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি।’
এর জবাবে কামরুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান বলছেন, বিরোধী দল তাদের কথা বলবে, বাজেটকে তাদের দৃষ্টিতে দেখবে। সরকারি দলের দৃষ্টিতে আমরা বাস্তব ও গণমুখী বাজেট বলবো। সরকারি দলের সঙ্গে বিরোধী দলের বাজেট প্রতিক্রিয়া না মেলাটাই স্বাভাবিক।
প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়োপযোগী আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার নির্বাচনি ইশতেহার দিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের বাজেট দেওয়া হয়েছিল। এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। সার্বিকভাবে এটিকে কৌশলী বাজেট হিসেবে দেখছি আমি।
এদিকে ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন পরে স্বাগত জানিয়ে রাজধানী ঢাকায় মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বাজেট ঘোষণার পরপর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করেন।
এনডিটিভি/পিআর