ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হারে বেড়েছে

ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
অর্থনীতি
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হারে বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:  বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির কারণে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০২৩ সালে ২,৭৯৩ ডলারে উন্নীত হয়েছে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও ধ্বংসস্তূপ পরিনত হওয়া দেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯১ ডলার। যদিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাড়ে তিন বছরের কিছু বেশি সময়ের শাসনামলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এবং ১৯৭৫ সালে মাথাপিছু আয় ২০৪ শতাংশ বা তিন গুণ বেড়ে ২৭৭ ডলারে উন্নীত হয়। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে তিনি দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ১১৪ ডলার যেখানে ১৯৭৪ সালে তা ছিল ১৭২ ডলার। ১৯৭২ সালে টাকা-ডলার বিনিময় হার ছিল ৭.৭ যা ১৯৭৫ সালে ১২.১৮ এ পৌঁছেছিল।

এরপর, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে মাথাপিছু আয় মাত্র ৬ ডলার বেড়েছিল। ওই অধিকাংশ সময় জুড়ে বাংলাদেশ সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ছিল। সরকারী তথ্যে দেখা গেছে, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সময়কালে মাথাপিছু আয় ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল যেখানে ১৯৯০ সালে মাথাপিছু আয় ২৭৭ ডলারে পৌঁছতে ১৫ বছর সময় লেগেছিল। যদিও ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের এই মাথাপিছু আয় ২৭৭ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল।

সামরিক স্বৈরশাসকদের দ্বারা শাসিত সেই সময়কালে মাথাপিছু আয় অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী ছিল। কারণ, এটি ছিল ১৯৭৬ সালে ১৩২ ডলার, ১৯৭৭ সালে ১২৩ ডলার, ১৯৭৮ সালে ১৬৬ ডলার, ১৯৭৯ সালে ১৯০ ডলার, ১৯৮০ সালে ২১৬ ডলার, ১৯৮১ সালে ২৩৫ ডলার, ২০৮১ সালে ২১৬ ডলার, ১৯৮৩ সালে ১৯৩ ডলার, ১৯৮৪ সালে ২০২ ডলার, ১৯৮৫ সালে ২৩২ ডলার, ১৯৮৬ সালে ২২১ ডলার, ১৯৮৭ সালে ২৪১ ডলার, ১৯৮৭ সালে ২৪১ ডলার, ১৯৮৮ সালে ২৫৮ ডলার, ১৯৮৯ সালে ২৭৪ ডলার, ১৯৯০ ২৯৪ ডলার ও ১৯৯১ সালে ২৮৩ ডলার।

বাসসের সাথে আলাপকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুই অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যায় যা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে খুবই ব্যতিক্রমী। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মূল কারণ প্রবাসী বাংলাদেশী ও তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন খাতে দেশের মেহনতি মানুষ।

তিনি বলেন, দেশের কৃষকরা এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তাদের কৃষিকাজ পরিচালনা করছে, ফলে ফসলের ফলন বেশি হচ্ছে ও মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে।


মান্নান  বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশীরাও দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন-যা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’ তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ পুরুষ ও নারী শ্রমিক বছরের পর বছর ধরে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য শিল্প খাতে কাজ করার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশের মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি উলম্ফনের এটাও অন্যতম প্রধান কারণ।

পরিকল্পনামন্ত্রী সর্বোপরি অর্থনীতির এই উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন। এই নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের এই দেড় দশকে টানা তিন মেয়াদে দেশের প্রধান সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন কল্যাণমুখী কর্মকান্ডের পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। তাদের মাথাপিছু আয় ও জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি সরকারের শাসনামলে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে, মাথাপিছু আয় মাত্র ১০২ ডলার বৃদ্ধি পায়। কারণ ১৯৯২ সালে ২৮৫ ডলার থেকে ১৯৯৬ সালে এটি ৩৮৭ ডলারে পৌঁছেছিল।

এরপর ১৯৯৭ সালে ৩৯৫ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০০১ সালে বেড়ে ৪১০ ডলারে উন্নীত হয়। যদিও সেই সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দার চলছিল ২০০১ সালের মার্চ থেকে সেই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ে।

এরপর ২০০১ থেকে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলে পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয় মাত্র ৯৩ ডলার বৃদ্ধি পায়। কারণ, মাথাপিছু আয় ২০০২ সালে ৪০৭ ডলার থেকে ২০০৬ সালে মাত্র ৫০৩ ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধির পায়। ২০০৯ সালে ৬৮৬ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০২৩ সালে ২৭৯৩ ডলারে পৌঁছেছে।

ক্রয় ক্ষমতার সমতা (পিপিপি) এর উপর মাথাপিছু আয় বিবেচনায়, আয়ও ২০২৩ সালে পাঁচ গুণ বেড়ে ২০২৩ সালে ৮৭৭৯ ডলার হয়েছে। যা ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ১,৭২৪ ডলার ছিল।

বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও কৌশল বাস্তবায়নের ভিত্তিতে মাথাপিছু আয় ধীরে ধীরে ২০১০ সালে ৭৭৬ ডলার, ২০১১ সালে ৮৫৬ ডলার, ২০১২ সালে  ৮৭৭ ডলার, ২০১৩ সালে  ৯৭৪ ডলার, ২০১৩ সালে  ১১০৯ ডলার, ২০১৪ সালে  ১১০৯ ডলার, ২০১৫ সালে ১২৩৬ ডলার, ২০১৬ সালে ১৬৬০ ডলার ২০১৭ সালে ১৮১৬ ডলার, ২০১৮ সালে ১৯৬৩ ডলার, ২০১৯ সালে ২১২২ ডলার, ২০২০ সালে ২২৩৩ ডলার, ২০২১ সালে ২৪৫৮ ডলার, ২০২২ সালে ২৬৮৮ ডলার ও ২০২৩ সালে ২৭৯৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এনডিটিভিবিডি/২৯ ডিসেম্বর/এএ