ডেস্ক রিপোর্ট: যমুনা নদীর উপর নবনির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতু ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’র নাম বদলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নাম বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিদর্শন শেষে পশ্চিমপাড় এলাকায় সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, সেতুটি কী নামে পরিচিত হবে সেটা এখন পর্যন্ত নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্ব-স্ব স্থানের নামেই স্থাপনার নাম দিতে আগ্রহী। তাই নবনির্মিত রেলওয়ে সেতুটির ক্ষেত্রেও তাই হতে পারে। আগামী বছরের শুরুর দিকে এ সেতু উদ্বোধনের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
রেলপথ সচিব আরও বলেন, যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে কম গতিতে ট্রেন চলতো। যে কারণে সময় বেশি লাগতো। নতুন এই সেতু চালু হলে প্রতিটি ট্রেন দ্রুত গতিতে চলতে পারবে। আমরা আশা করছি, আগামী জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে এ সেতুর উদ্বোধন হবে। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
ইতোমধ্যে সেতুর ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পে কোনো অর্থ সাশ্রয় হয়েছে কি না তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরে সেতুর পূর্বপাড় এলাকা পরিদর্শনে যান রেলপথ সচিব।
পরিদর্শনকালে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। গতি কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে থাকে শিডিউল বিপর্যয়, বাড়তে থাকে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে তৎকালীন সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
এতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৬ হাজার ৭৮১ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নাম দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের এই সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণকাজ করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন রেল সেতু চালু হলে ডাবল লাইনে দ্রুত গতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে।