ঢাকা , সোমবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

ব্রিটিশ আমলের বাঙালি শিল্পপতি বজলুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
নাগরিক দৃষ্টি সংবাদ
ব্রিটিশ আমলের বাঙালি শিল্পপতি বজলুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আশিক আহমেদ:  ব্রিটিশ আমলে বাঙালি শিল্পপতি এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মী বজলুর রহমান মোল্লার ৫২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি খুলনায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মো. বজলুর রহমান মোল্লা ১৯০১ সালের ২৫ জুন তৎকালীন যশোর জেলার কালিয়া থানার দেওয়াডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম বাহাদুর মোল্লা এবং মায়ের নাম সখিনা বেগম। বাহাদুর মোল্লা দেওয়াডাঙ্গা গ্রামের জমিদার ছিলেন। বজলুর রহমান দেয়াডাঙ্গায় মাদ্রাসা ও প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার দুই পুত্র শৈশবে মারা যান। আর একমাত্র কন্যা হোসনে আরা বেগম মিনি কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপিকা ছিলেন।

বজলুর রহমান ১৯২২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ডিসটিংশন পেয়ে গ্রাজুয়েট হন। ব্রিটিশ সরকার তাকে সম্মানসূচক ‘বি রহমান’ হিসেবে টাইটেল দেন। তিনি ১৯৩০ সালে অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি ডাইরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশনসের (ডিডিপিআই) খান বাহাদুর মওলা বকসের তৃতীয় কন্যা ওয়াহিদা খাতুনকে কলকাতায় বিয়ে করেন। তখন তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে কাজ করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে ব্রিটিশবিরোধী মুভমেন্টে যোগ দেন। ওই সময়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টে স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করে সামান্য ভোটে পরাজিত হন।

চাকরি ছেড়ে বজলুর রহমান পেশা হিসাবে শিল্প ও রপ্তানি বাণিজ্যকে বেছে নেন। চীনের সঙ্গে তার আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা ছিল। মূলত ট্যানারি ব্যবসা। জুতা ও চামড়াজাত ব্যাগ প্রস্তুত শিল্পের মালিক ছিলেন তিনি। কলকাতার ইস্টার্ন সু কোম্পানিটি ছিল তার মালিকানার। তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে জুতা সরবরাহের ব্যবসাও করতেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তিনি কলকাতায় বাড়িঘর, কারখানা সব রেখে স্ত্রী-মেয়ে ও কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে একটি ট্রলারে করে দেওয়াডাঙ্গায় চলে আসেন। কলকাতার থাকা বাড়ি ও কারখানা খুলনার এক হিন্দু ভদ্রলোকের সঙ্গে বিনিময় করেন। আমৃত্যু তিনি স্ত্রীর সাথে খুলনার বাড়িতেই বসবাস করেন।

বি রহমান খুলনায় প্রথম যন্ত্রচালিত লঞ্চ আমদানি করেন। নাম ছিল মিনি। ওনার অসুস্থকালীন লঞ্চটি ঘাটে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যায়। তার দৌলতপুরে থাকা পাটের গোডাউনগুলো রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়।

বিহারিদের আক্রমণ থেকে হিন্দুদের রক্ষা করতে গিয়ে উনি একটি চোখ হারান। পরে ওখানে গ্যাংগ্রিন হয়। গলায় ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।

তার একমাত্র বোন হালিমা বেগম ডালিম আর মাজেদ মোল্লা নামের একজন সৎভাই ছিলেন। বজলুর রহমানের একমাত্র মেয়ে হোসেনে আরা বেগম মিনি ১৯৯৪ সালে ২৭ জুন ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার এক ছেলে ড. হাসিবুস শাহীদ রানা এবং এক মেয়ে এলিস ইনতিন আরা তুহিন। ড. শাহীদ রানা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং এলিস ইনতিন পাকশী রেলওয়ে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক।

(এনডিটিভি/২৭ডিসেম্বর/এনএস)