ডেস্ক রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এক শিক্ষক এবং আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষা পরিষদের এক সদস্যকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমান প্রশাসনের সমালোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্যাসিস্টের সহযোগীদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সমন্বয়ক সালাহ্উদ্দিন আম্মার।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে চারজন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তামজীদ হোসেন মোল্লাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষা পরিষদের সদস্য চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজিয়া আফরিনকেও নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৩১ জুলাই দেশব্যাপী নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ব্যানারে কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সহযোগী অধ্যাপক তামজীদ হোসেন মোল্লা।
সম্প্রতি এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাবির শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের হলুদ প্যানেল থেকে শিক্ষা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজিয়া আফরিন।
তামজীদ হোসেন মোল্লাকে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় অফিস আদেশের ছবি এবং শিক্ষর্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার ছবি ফেসবুকে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামক গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত টাইমলাইনে পোস্ট করে সমালোচনা করেছেন অনেকে।
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ওয়াট ইস দিস রাবি প্রশাসন? ৮ বছর হাউস টিউটর ছিল তাপসী রাবেয়া হলে তামজীদ হোসেন মোল্লা আওয়ামী শাসনামলে। তাকে নাকি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সে আন্দোলনের বিরুদ্ধে মাঠে সোচ্চার ছিল।’
ফেসবুক পোস্টে আম্মার আরও লিখেন, ‘কিসের ভিত্তিতে তাকে সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দিচ্ছেন? আপনাদের বিরুদ্ধে কি যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে? অবিলম্বে তার নিয়োগ বাতিল এবং এর কারণ দেখাবেন প্রশাসন। একের পর এক ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন আপনারা।’
আরেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা হলুদ প্যানেলে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের তালিকা এবং অফিস আদেশটির ছবি পোস্ট করে তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের নাজিয়া আফরিন। যিনি আওয়ামী হলুদ প্যানেল থেকে শিক্ষা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাকে নতুন করে সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী ও তাদের দোসরদের প্রশাসন যেভাবে পুনবাসন করছে তার জবাব দিতে হবে।’
টাইমলাইনে অপর আরেকটি পোস্টে এই সমন্বয়ক লিখেন, ‘এ দুটি কাগজে স্বাক্ষর করেছে রেজিস্ট্রার। একটিতে আন্দোলনকারীদের বিচারের জন্য তদন্ত কমিটি আরেকটিতে ফাসিস্টদের পুর্নবাসন। এবার কি এক্সিউজ দেবেন প্রস্তুতি নেন।’
সহকারী প্রক্টর নিয়োগের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সমন্বয়ক সালাহ্উদ্দিন আম্মার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যারা আছেন তাদের নূন্যতম যোগ্যতা নেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার। তাদের প্রতি আমাদের যে আস্থা ছিল তা বিগত চার মাসে তারা রাখতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট এবং ফ্যাসিস্টদের তারা পুনর্বাসন করে চলেছে। এর আগের আওয়ামী প্রশাসন থাকা অবস্থায় তারা অন্য কোনো মত বা দলের শিক্ষককে কোথাও নিয়োগ করেনি। তবে বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়া তামজিদ হোসেন মোল্লাকে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এটি জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি। আমরা আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে সব ফ্যাসিস্টকে অপসারণ এবং পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে। অন্যথায় আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসন ভবন তালা দিয়ে আন্দোলনের ডাক দেব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, যখন তাদের নিয়োগ দেই তখন জেনেছি ছাত্রদের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক। ৩১ জুলাই তাদের অবস্থানের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য ছিল না। তাছাড়া সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগে শিক্ষক হিসেবে যে যোগ্যতা প্রয়োজন সেখানে তামজীদ মোল্লার এগিয়ে আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার বেশি মাতামাতি কিংবা ছাত্রদের বিপক্ষে তার কোনো বিবৃতিও আমরা দেখিনি। তাছাড়া এই পদের জন্য অনেকেই রাজি না। ফলে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি আমাদের নজরে এসেছে। উপাচার্য স্যার বলেছেন উক্ত পদে তারা যোগ দেবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এই বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করব।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ ছিল না। এখন যেহেতু তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে এবং জুলাই বিপ্লবে বিরোধিতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এনডিটিভি/এলএ