ঢাকা , শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

ছেলের ফলাফল জালিয়াতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাবার বিরুদ্ধে মামলা

জানুয়ারী ২১, ২০২৫
বাংলাদেশ
ছেলের ফলাফল জালিয়াতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাবার বিরুদ্ধে মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট: এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের ফলাফল জালিয়াতি করেছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে এটির সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নগরের পাঁচলাইশ থানায় ফৌজদারি মামলা করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বোর্ডের সচিব প্রফেসর ড. এ. কে.এম. সামছু উদ্দিন আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

নারায়ণ চন্দ্র নাথ বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি মাউশির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক ছিলেন। পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় নারায়ণের পাশাপাশি তার ছেলে নক্ষত্র দেব নাথ, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান (৬১) এবং প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার নামে একজনকে আসামি করা হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৩৪ ধারার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নারায়ণদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেব নাথের ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার (বিজ্ঞান বিভাগ; রোল ১০৮৫৫৪) ফলাফল জালিয়াতি তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় নারায়ণ এবং জালিয়াতিতে তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে বাংলা বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পান নক্ষত্র। তবে বাংলায় এ পেলেও অতিরিক্ত বিষয়ের পয়েন্ট যুক্ত হওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে তিনি জিপিএ-৫ পান।

ওই বাংলা বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে নক্ষত্রের পরিবারের লোকজন দেখেন আগে থেকে অনলাইনে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য কে বা কারা আবেদন করে দিয়েছেন। তাও শুধুমাত্র একটি বিষয়ে নয়, ১২টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন। এটির তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের মোবাইল ফোন নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নক্ষত্র দেবনাথের নামে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনটি করা হয়েছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

আদালতের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব আবদুল আলিম ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।