মো: তানজিম হোসাইন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম নগরের সড়কগুলোর যানজট ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কিছু পদক্ষেপ নিলেও যানজটের সমস্যা সামগ্রিকভাবে কমছে না বলে জানিয়েছেন নগরবাসী।
সিএমপি সূত্র মতে, গত মাসে সড়ক পরিবহন আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মোট ৩,৭১১টি মামলা করা হয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে জরিমানা করা হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ২৫০ টাকা এবং আটক করা হয়েছে ৪,৪৩৬টি অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে, যেখানে একাই ১,৩২৯টি মামলা হয়েছে এবং জরিমানা হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। জরিমানা এবং গাড়ি আটকের শীর্ষে ছিল ট্রাফিক উত্তর বিভাগে।
অবৈধ গাড়ি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, লাইসেন্সবিহীন রিকশা ও মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে সিএনজি ও টেম্পোর অবাধ চলাচলকে দায়ী করছেন নগরবাসী। অনেক ক্ষেত্রে এসব অবৈধ যানবাহন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় চলাচল করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন নানা অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে; বিশেষ করে অবৈধ গাড়ি থামানো এবং লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে তৎপরতা নিয়ে।
সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়ি এবং সড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণসামগ্রী রাখায় নগরবাসীকে নিয়মিত যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং যানজটের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
নগরের বাসিন্দারা জানান, অবৈধ পার্কিং, প্রধান সড়কে চালকদের নিয়ন্ত্রণহীন চলাচল এবং ছোট রাস্তাগুলোতে সিএনজি ও ব্যাটারি রিকশার যত্রতত্র চলাচল যানজটের অন্যতম কারণ। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও অলিগলিতে তাদের উপস্থিতি কম। এতে করে এসব ছোট রাস্তায় অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এক ভুক্তভোগী মো. আবির বলেন, “গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাট যেতে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট লেগেছে। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে এটি মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের পথ।” নগরজুড়ে সড়ক দখল করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও অবৈধ যানবাহনের অবাধ চলাচল সাধারণ মানুষের সময় ও অর্থের অপচয়ের কারণ হচ্ছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ–কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, "যেসব যানবাহন লাইসেন্স, রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত মাসে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩,৭১১টি মামলা হয়েছে। অভিযানে গ্রাম সিএনজি ও ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা বেশি থাকায় এদের আটক করা হলেও, তারা আবারও প্রধান সড়কের বাইরে ছোট রাস্তায় সক্রিয় হয়ে ওঠে।”
চট্টগ্রাম নগরের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের এই তৎপরতা যতই বাড়ুক, মূল সমস্যা সমাধানে স্থায়ী পরিকল্পনার অভাবের কারণে যানজটের সমাধান মিলছে না। নগরের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং উন্নয়ন কাজের অসংগতি নগরবাসীর জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
এনডিটিভি/এলএ