মো: তানজিম হোসাইন
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনে এক অভূতপূর্ব সংকট তৈরি করেছে। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম দিন দিন কঠিনতর হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সবজির দামে সামান্য স্বস্তি মিললেও চাল-ডাল, পেঁয়াজ, আটা-ময়দা এবং অন্যান্য মুদি পণ্যের বাজার এখনো আকাশছোঁয়া। চালের দাম প্রতি ৫০ কেজি বস্তায় ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, আটাসহ অন্যন্য প্রতোজনীয় পণ্যের দামও বেড়েছে। সাধারণ মানুষের সাধ্যমতো খাবার নিশ্চিত করাই এখন রীতিমতো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের চোখে-মুখে আজ শুধুই হতাশা। তারা যে স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন কাজ করে, সেই স্বপ্ন এখন খাবার টেবিলে সামান্য আহার জোগানোর সংগ্রামে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মাংস, মাছ তো বহু দূরের কথা—চাল, ডাল, আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনতেই তাদের রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বাজারে গিয়ে দিনশেষে তাদের হাতে যা থাকে, তা দিয়ে একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা যেন এক বিশাল যুদ্ধ।
আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে। রোজকার বাজারের হিসাব মিলাতে তাদের মনের ভেতর স্বপ্নের পরিবর্তে বাসা বাঁধছে হতাশা আর ক্ষোভ। উচ্চবিত্তের কাছে হয়তো এটি তেমন কিছু নয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এটি তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার হরণের সামিল।
এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আর বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাব। সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা সরকারের প্রতিশ্রুতি—কিন্তু বাস্তবে কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে মানুষ এই সংকট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। যখন তাদের আয়ের কোনো বৃদ্ধি নেই, তখন প্রতিনিয়ত ব্যয়ের বোঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি পরিবার আজ বাচ্চার পড়াশোনা থেকে শুরু করে তাদের পুষ্টি চাহিদা পর্যন্ত পূরণ করতে পারছে না। শিক্ষার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন, তা এখন বাজারের ব্যাগ ভর্তি করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এই অবস্থা চলতে থাকলে, দেশ এক স্থবির অবস্থায় পৌঁছাবে। শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে, কারণ পরিবারের অর্থ ব্যয় হচ্ছে শুধুই খাদ্যে, ভবিষ্যতের জন্য কোনো সঞ্চয়ের সুযোগ নেই। একটি প্রজন্ম, যারা দেশের মেরুদণ্ড হতে পারত, তারা আজ এই দুর্যোগে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
আমাদের এই অভাবের তাড়না দূর করতে এখনই প্রয়োজন দ্রব্যমূল্যের ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন—মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব গ্রহণ করুন, বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর পদক্ষেপ নিন। সাধারণ মানুষ তাদের আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে চায়। দেশের উন্নয়নের জন্য, সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য এই সংকট নিরসন জরুরি।
আমরা চাই আমাদের স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকুক। আমাদের সন্তানরা সঠিক পুষ্টি ও শিক্ষা পেয়ে বেড়ে উঠুক। এজন্যই প্রয়োজন দ্রব্যমূল্যের দমনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ।