নিজস্ব প্রতিবেদক : আলোচিত ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ নিয়ে নিজের আশাবাদের কথা জানালেন চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এমনকি এই গ্রুপের সদস্যদের তিনি চিহ্নিত করেছেন এক বিশেষ অভিধায়। তিনি মনে করেন, এফডিসি নয়, অন্য অঙ্গনের শিল্পীরাই প্রকৃত অর্থে শিল্পী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ফেসবুকে ফারুকী লিখেছেন, ‘এটা নিশ্চয়ই বেদনার যে, আমাদের দেশে শিল্পীর সাইনবোর্ড নিয়ে এমন লোকজন ঘুরে বেড়াতো, যারা গণহত্যায় প্রত্যক্ষ উসকানিদাতা অথবা কেউ কেউ নীরব সমর্থক ছিল। এরা শুধু শিল্পী হিসেবে না, মানুষ হিসেবেও নিচু প্রকৃতির। একাত্তরে জন্ম নিলে এরা রাজাকারের দায়িত্ব পালন করতো। ফলে এদের এ যুগের রাজাকার বলতে পারেন। গণহত্যায় সমর্থন এবং উসকানি দেওয়ার অপরাধে নিশ্চয়ই এদের বিচার হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী সমর্থক শিল্পীদের একটি গোপন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের কথপোকথন। সেখানকার বেশির ভাগ সদস্য গত ১ আগস্ট হাজির হন বিটিভির ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে। গ্রুপটির স্ক্রিনশট জানান দিচ্ছে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে কাজ করতেন তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শিল্পীদের চিহ্নিত করতে কাজ করে যাচ্ছিলেন তারা। নিজের ফেসবুক পোস্টে চলচ্চিত্রকার ফারুকী তাদের ‘রাজাকার’ বলে গণ্য করেছেন।
তবে এই গ্রুপটি আশাবাদী করেছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে। ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আশার দিকটা আপনাদের বলি, এই গ্রুপের বেশিরভাগই আসলে কোনো শিল্পচর্চার সাথে সেই অর্থে জড়িত না। আমাদের মেইনস্ট্রিম অভিনয়শিল্পী বা ফিল্মমেকারদের কেউই এদের সাথে নাই।’ এফডিসির বাইরে টেলিভিশন, ওটিটি ও চলচ্চিত্রে যারা কাজ করছেন তাদের মূলধারার বিবেচনা করে ফারুকী বলেছেন, মেইনস্ট্রিম শিল্পী ও নির্মাতারাই এই অঙ্গনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।
‘আলো আসবেই’ গ্রুপের কথপোকথনে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতিকে লিখতে দেখা গেছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন। ফায়ার সার্ভিস ও গণমাধ্যমকর্মীদের ঢুকতে দিচ্ছে না টোকাই জামায়াত-শিবিরের মেধাবী আন্দোলনকারীরা।’ অরুণা বিশ্বাস উত্তরে লিখেছেন, ‘গরম জল দিলেই হবে।’ সুইটি লিখেছেন, ‘কোনোভাবেই পিছে হটা চলবে না। আমরা কখন কীভাবে কোথায় একত্রিত হবো, সেটা আমরা সবাই মিলে ঠিক করে বের হবো।’
আলোচিত-সমালোচিত ‘আলো আসবেই’ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছিলেন বিনোদন অঙ্গনের অভিনেতা ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ, নায়ক রিয়াজ, আজিজুল হাকিম, রওনক হাসান, মামুনুর রশিদ, সাজু খাদেম, ফজলুর রহমান বাবু, সাইমন সাদিক, জুয়েল মাহমুদ, জায়েদ খান, ঝুনা চৌধুরী, লিয়াকত আলী লাকি ও মো. শাহাদাত হোসেন। অভিনেত্রীদের মধ্যে ছিলেন অরুণা বিশ্বাস, সুবর্ণা মুস্তফা, শমী কায়সার, সুইটি, স্বাগতা, সোহানা সাবা, আশনা হাবীব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, শামীমা তুষ্টি, দীপান্বিতা মার্টিন, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, সঙ্গীতা মেখাল, সৈয়দা শাহানুর, উর্মিলা শ্রাবস্তী কর ও হৃদি হক। নির্মাতাদের মধ্যে ছিলেন গুলজার, বদরুল আনাম সৌদ, এস এ হক অলীক, রুনি, রুবেল শঙ্কর, রাজিবুল ইসলাম রাজিব ও মাসুদ পথিক। এছাড়া সরকারের সদ্য সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্যপ্রতিমন্ত্রী এম এ আরাফাত, ডিবি হারুন ছাড়াও অন্তত আড়াই শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে এই গ্রুপটি বিরোধিতাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজে নিয়োজিত ছিল গ্রুপটিতে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ মুক্তি পায় গত বছর। তাতে প্রথমবারের মতো অভিনয়ও করেন তিনি। ২০১৬ সালের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তার বানানো সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দেশে সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি। দীর্ঘ বিরতির পর সনি লিভ নামের একটি বিদেশি ওটিটিতে মুক্তি পায় ছবিটি, যা এ দেশের মানুষের দেখার সুযোগ ছিল না। এই নির্মাতার বানানো সিরিজ ‘৪২০’ দেশের রাজনৈতিক অবস্থাকে নগ্ন করে তুলে ধরেছিল। সে কারণে মাঝপথে সিরিজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এনডিটিভিবিডি/০৪সেপ্টেম্বর/এএ