ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আমি সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডের বিরোধী নয়। তবে তার আগে আমাদের বেসিক মিনিমাম পেমেন্টটা ঠিক করতে হবে। আমাদের দেশের গার্মেন্টস-নৌশ্রমিকদের জন্যও সেটা আছে কিন্তু সাংবাদিকদের নেই।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ফ্রি প্রেস ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত 'কেমন গণমাধ্যম চাই' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, আমাদের সাংবাদিকদের খুবই কম বেতন দেওয়া হয়। এরা মানবেতর জীবনযাপন করে, যা কল্পনা করা যায় না। এ জায়গায় আমাদের ইউনিয়নের লিডাররা বছরের পর বছর ফেল করেছে। আমাদের যে ছেলেটা সাংবাদিকতায় আসবে তাকে আমরা দিচ্ছি ৫ হাজার টাকা, ১০ হাজার টাকা। সাংবাদিকতা একটা নেশার মতো। সে তার নাম ছাপায় দেখতে চায়, একটা গল্প বলতে চায়। এই নেশার কারণেই আসে। আর এই আসার কারণেই তাকে ট্র্যাপে ফেলে দেন মালিকরা।
তিনি বলেন, আজকে এই যে প্রিয় মারা গেলেন বা হাসান মেহেদী মারা গেলেন; এর জন্য খুনি হাসিনা যেমন দায়ী তেমনি কিছুটা হলেও দায়ী মালিকরা। তারা কি আমাদের সেইফটি ইক্যুপমেন্ট দিচ্ছেন? আমরা কি একটা হেলমেট পাচ্ছি, আমরা কি একটা বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পাচ্ছি? এটা তো বেসিক মিনিমাম জিনিস। দেশের বাহিরে এগুলো ছাড়া সাংবাদিকতা করতেই দেয় না।
সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণের জন্য সবার একযোগে আওয়াজ তোলা উচিত মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা প্রেস ক্লাব, রিপোর্টাস ইউনিটির একযোগে বেতন ইস্যুতে আওয়াজ তোলা উচিত। সেটা আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা হোক বা ওয়েবসাইট হোক; তাকে একটা ভালো রকমের বেসিক মিনিমাম পেমেন্ট দিতে হবে। আর যদি এর নীচে দেন তাহলে জার্নালিজম সেক্টরে আইসেন না। জার্নালিজম করতে হলে আপনার টাকা খরচ করতে হবে। আপনি এসে হাতে একটা প্রেস কার্ড ধরিয়ে দিলেন বা একটা আইডি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললেন সাংবাদিকতা করে খাও, এটা যাতে না হয়। এটা খুবই প্রকট হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলে। অনেক টাকার মালিক তাদের জেলা প্রতিনিধিদের হয়ত দুই হাজার টাকা দিচ্ছেন বা দিচ্ছেনই না। কার্ড দিয়ে বলছেন তুমি করে খাও। এ রকম মানুষের মুখ উন্মোচন করা উচিত।
তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকেন নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ বিরোধী নতুন সাংবাদিকতা হবে। যাতে বাংলাদেশে আরেকটা ফ্যাসিবাদ না তৈরি হয়। হাসিনা একটা মনস্টার, সে চলে গেছে, আরেকটা মনস্টার যাতে তৈরি না হয় সেটার জন্য আমাদের সবার শপথ নিতে হবে।
আন্দোলনে নিহত হওয়া সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত জুলাই-আগস্টে আমাদের সাংবাদিকরা যে রকম সাংবাদিকতা করেছেন সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা দেখি নাই। আমি বলব বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সাংবাদিকদের জন্য একটা গর্বিত মুহূর্ত। আর সাংবাদিকসহ যারা মারা গেলেন, আমি আসলে মারা গেলেন বলব না... যারা 'খুন হলো' সেই গল্পগুলো আমরা তখনই শুনেছি। ১৯৭১ এর পর থেকে এই পর্যন্ত একটা ইভেন্টে এতো সাংবাদিক কখনো মারা যায়নি। সাতজন সাংবাদিক মারা গেছেন, শহীদ হয়েছেন। আমার মনে হয় এটা আমাদের প্রত্যেকটা প্রেস ক্লাবে, রিপোর্টারদের যতগুলো অ্যাসোসিয়েশন আছে সব জায়গায় এদের নাম লিখে রাখা উচিত সোনার অক্ষরে।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এম আব্দুল্লাহ বলেন, আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা যে কতটা তা বলে বুঝানো যাবে না। এরা কিন্তু কেউ তারকাখ্যাত সাংবাদিক না তবুও তারা কাজ করে গেছেন সম্মুখে। যারা কাজ করে গেছেন, মারা গেছেন আমরা কিন্তু তাদের কথা বলছি না। গত ১৫ বছরে ৬১ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে সাগর রুনিও আছে, যার শেষ হয়েছে হাসান মেহেদী, প্রিয়দের মাধ্যমে।
ছেলের স্মৃতিচারণ করে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেন, একসময় আমরা সিনেমাটোগ্রাফি বা ফটোগ্রাফিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতাম না। যেহেতু আমরা এই সমন্ধে বুঝতাম না। কিন্তু আমি আজকে আমার ছেলের কাজের জন্য গর্বিত।
তিনি বলেন, প্রিয় অল্প বয়সে বিয়ে করেছে। আমি বলেছিলাম তুমি ভুল করেছো। এখন ভালো লাগলেও অভাব আসলে সেটা আর ভালো লাগবে না। তারপর সে অনলাইন পত্রিকা দ্য রিপোর্টে চাকরি নেয়। তার বেতন ছিল ১৪ হাজার টাকা। পরিবার নিয়ে একটি মানুষ ঢাকা শহরে ১৪ হাজার টাকায় কীভাবে চলে? তাদের যে পরিমাণ খাটুনি হয় সে অনুযায়ী তাদের বেতন কিছুই না। আমি মনে করি সংবাদকর্মীদের বেতন বাড়ানো হোক। আমার মনে হয় সংবাদের অফিসগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হোক। তাহলে কর্মীরা আরও ভালো কাজ করতে পারবে। তাদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া দরকার। কারণ সারাদিন তারা ঘুরে বেড়ায়। তাদের যে বেতন, তারা নিজে খাবে নাকি সংসার চালাবে?
শহীদ প্রিয়র মা বলেন, আমার ছেলের মতো যে সাংবাদিক বা যে সন্তানগুলোকে মারা হলো, আমার মনে হয় তাদের না মারলেও হতো। আর এই চার মাসে সরকার কাজ করতে পারছে না। কারণ এখন যেসব মিডিয়া আছে সবার মাথায় আগের লোকজনই আছে। আমি সংবাদ মাধ্যমের সংস্কার চাই।