ঢাকা , শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

গরুর মাংসের দাম আবার ৭০০ টাকা কেজি, ব্যবসায়ীরা কী বলছেন ?

জানুয়ারী ১৫, ২০২৪
অর্থনীতি
গরুর মাংসের দাম আবার ৭০০ টাকা কেজি, ব্যবসায়ীরা  কী বলছেন ?

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে আবারও বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। নির্বাচনের মাসখানেক আগে মাংসের ব্যবসায়ী ও খামারিরা মিলে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ক্ষেত্রবিশেষে সেটা কার্যকরও হয়। এর ফলে বাজারে অন্যান্য মাংস ও মাছ মিলিয়ে প্রাণিজ আমিষের দামও কিছুটা কমে। এতে ভোক্তারা স্বস্তি পান। কিন্তু নির্বাচন শেষে গরু সরবরাহে সংকটের কথা বলে ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম আবার বাড়িয়ে দিয়েছেন।
রবিবার রাজধানীর পলাশী বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গরুর মাংস এখন ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু দেখেশুনে নিতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রে দাম আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে কোনো কোনো বিক্রেতা এখনো ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছেন। তবে কম দামে বিক্রি করা বিক্রেতার সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা। কম দামে কিনতে গেলে অবশ্য মাংসের মান ও পরিমাণে আপস করতে হয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে চর্বি ও হাড় বেশি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।

মাংস বিক্রেতা তপন মুনশি বলেন, একটু ভালো মানের মাংস সরবরাহ করতে গেলে অনেক সময় ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির পরে বেচাকেনা কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের কিছুটা সংযত দেখা গিয়েছিল। নির্বাচন শেষে তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
খামারি, গরু ব্যবসায়ী, কসাই ও ক্রেতাসব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে গরুর মাংসের দাম যখন বেশি ছিল, তখন বেচাকেনা অনেক পড়ে গিয়েছিল। মাংসের দাম কম রাখার পরে বেচাবিক্রি অনেকটাই বেড়েছিল। প্রতি কেজি মাংসের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমার ফলে অনেকে সারিতে দাঁড়িয়েও মাংস কিনেছিলেন।

কিন্তু সেই চিত্র এক মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বেচাকেনাও আবার কমে এসেছে। মাংসের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা গরুর মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘অনেকে কোরবানির জন্য গরু মজুত করা শুরু করেছেন। তাতে এখন আর কম দামে গরু পাওয়া যাচ্ছে না। যার জন্য মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে না পারছি ক্রেতাদের দাবি রক্ষা করতে, না পারছি ব্যবসা করতে। মাংসের বাজারে একটা উভয়সংকট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, এক মাসের মধ্যে গরুর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। কারণ, উৎপাদন খরচ নতুন করে বাড়েনি। আবার এই সময়ের মধ্যে সরবরাহেও বড় কোনো সংকট তৈরি হয়েছে, তা–ও বলা যাবে না। তবে গোখাদ্যের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে সময়ে সময়ে অনেক খামারি উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদন হয়েছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে মাংসের দাম ছিল বেশি। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদন এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার টন কম হয়েছিল।

দেশে বিদায়ী ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৮০০ টাকা। তখন থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত তা ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। পাঁচ বছর আগে দেশের বাজারে গরুর মাংসের দাম ছিল ৪৭০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।

নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে নাসির উদ্দিন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘কিছুদিন গরুর মাংস বেশ কমে কিনেছি। এখন আবার বাড়ল। এতে করে খরচ আবার বাড়বে। তাতে কেনাকাটা কমাতে হবে।’ অবশ্য রোজার আগে মাংসের দাম প্রতিবারই এক দফা বাড়তে দেখা যায় ।
এনডিটিভিবিডি/১৫জানুয়ারি/এএ