ঢাকা , শুক্রবার, জানুয়ারী ৩, ২০২৫

হাই-অ্যালার্টে ফায়ার সার্ভিস, কঠোর নিরাপত্তায় পুলিশ

ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
বাংলাদেশ
হাই-অ্যালার্টে ফায়ার সার্ভিস, কঠোর নিরাপত্তায় পুলিশ

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানী ঢাকায় মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে ইংরেজি নতুন নববর্ষ উদযাপিত হবে। থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এই রাতে। এছাড়া নতুন বছরের প্রথম প্রহরে রাজধানীতে যাতে কোনোভাবেই কেউ ফানুস না ওড়ায় ও আতশবাজি কিংবা পটকা যেন না ফোটায় সে সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিএমপির আওতাভুক্ত থানাগুলোকে।

থানাগুলোকে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিজ নিজ থানা এলাকায় যেন কোনোভাবে ডিএমপির নির্দেশনা অমান্য করে কেউ যাতে থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ফোটানো কিংবা ফানুস ওড়াতে না পারে। পাশাপাশি যারা ফানুস ও আতশবাজি বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

এদিকে থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে হাই-অ্যালার্টে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ফানুস ও আতশবাজি থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড সামাল দিতে এরইমধ্যে দেশের সব ফায়ার স্টেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেন তারা সতর্ক অবস্থায় থাকে।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর যেসব এলাকায় ফানুস ও আতশবাজি বিক্রি হয় থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে গত কয়েকদিন সেসব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএমপির বিভিন্ন থানা পুলিশ। স্থানীয় ফানুস বিক্রেতাদের ফানুস বিক্রি না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট থানাধীন এলাকায় যেন কোনোভাবে থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে ফানুস বিক্রি ও ওড়ানো না হয়। তারপরেও যদি কেউ ফানুস ওড়ায় তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

আরো জানা যায়, নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। বাড়তি নিরাপত্তায় থাকবে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলো। ওইসব এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে যাতে থার্টিফার্স্ট নাইটের কোনো অনুষ্ঠান না হয় সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কঠোর। তারপরও কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করে তাহলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকবে নিরাপত্তা চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে কাউকে সন্দেহ মনে হলে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ডিএমপির প্রতিটি থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোনো ব্যবসায়ী ফানুস-আতশবাজি বিক্রি করতে পারবে না। যদি কেউ বিক্রি করার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কোনো অভিভাবক সন্তানের হাতে ফানুস-আতশবাজি দেবেন না। যদি কেউ এসব কেনেন এবং ওড়ানোর চেষ্টা করেন তার বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও মানে না বেশিরভাগ মানুষ। গত কয়েক বছর ডিএমপি কমিশনারের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং- III/৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে রাত ১২টা থেকে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফুটানো, ফানুস ওড়ানো ও মশাল মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

কিন্তু তাতে থামিয়ে রাখা যায়নি উদযাপন। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ঢাকাবাসী। আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে ওঠে ঢাকার আকাশ, সেই সঙ্গে আকাশে দেখা মেলে হাজারে হাজার ফানুসের।

এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকবে পুলিশের চেকপোস্ট ও তল্লাশি। এছাড়া পুরো রাজধানীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক থাকবেন।

এ সময় তিনি ফানুস ও পটকার বিষয়ে বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে কোনো ধরনের ফানুস ওড়ানো যাবে না, একইসঙ্গে কোনো ধরনের পটকা কিংবা আতশবাজি ফোটানো যাবে না। আমরা এ বিষয়ে খুবই কঠোর থাকব। এরইমধ্যে ডিএমপি নানা ধরনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ১৩ বস্তা আতশবাজি ও পটকাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-লালবাগ বিভাগ।

ডিএমপি প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং থার্টিফার্স্ট নাইটের সপ্তাহখানেক আগে অভিযান পরিচালনা করে আতশবাজি ও ফানুস জব্দ করে। কিন্তু এত কিছুর পরও থার্টিফার্স্ট নাইটে ঠিকই ঢাকা শহরে আতশবাজি ফুটে এবং ফানুস উড়ে। আর এর কারণে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মাতুয়াইল স্কুল রোডের একটি বাড়িতে ফানুস থেকে বড় ধরনের আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। একই রাতে ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯০টি।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, এসব ঘটনায় একদিকে যেমন মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়, অন্যদিকে আগুন আতঙ্কে ম্লান হয় নববর্ষ উদযাপন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আতশবাজি ও ফানুসে সারাদেশে এক কোটি আট লাখ ৬৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি না ফোটানো এবং ফানুস না ওড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাহিনীটি।

এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে হাই-অ্যালার্টে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সারাদেশে ফায়ার স্টেশনগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত কয়েকটি থার্টিফার্স্ট নাইটের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে আমাদের সকল ফায়ার স্টেশনগুলোকে হাই-অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। যাতে করে থার্টিফার্স্ট নাইটের ফানুস উড়ানোকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অগ্নিঘটনা সৃষ্টি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এছাড়া আমরা সবার কাছে অনুরোধ জানাব তারা যেন এই ফানুস না ওড়ান, কারণ এর কারণে অগ্নি দুর্ঘটনা সৃষ্টি হয়।