ঢাকা , শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের ‘অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা’ বিষয়ক প্রস্তাব পাস

মে ১০, ২০২৪
আন্তর্জাতিক
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের ‘অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা’ বিষয়ক প্রস্তাব পাস

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনের ‘অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা’ বিষয়ক একটি প্রস্তাব (ইউএনজিএ) পাস হয়েছে।

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিউ ইউর্কের স্থানীয় সময় সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) প্রস্তাবটি পাস হয়। ভোটাভুটির আগে সাধারণ পরিষদের সদস্যরা প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভাষণ দেন।

প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩টি সদস্য রাষ্ট্র। বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি এবং ভোটদানে বিরত থাকে ২৫টি দেশ। ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের পর হাঙ্গেরি, আর্জেন্টিনা ও আলবেনিয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়নি।

প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় একে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই ভোটাভুটির নিন্দা জানিয়েছে।

প্রস্তাবটি পাস হওয়ার ফলে পুনরায় নিরাপত্তা পরিষদকে জাতিসংঘের ১৯৪ তম সদস্য করার জন্য ফিলিস্তিনের অনুরোধটি অনুকূলভাবে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাতে পারবে সাধারণ পরিষদ।

এছাড়াও রেজুলেশনটি পাস হওয়ায় ফিলিস্তিন এখন থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যপদ সহ আরও বেশি অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা পাবে।

ফিলিস্তিন বর্তমানে একটি নন-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র। গত মাসে পূর্ণ সদস্যপদের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছিল। তবুও, সাধারণ পরিষদ এই জরুরি অধিবেশনে এই রেজুলেশনের দিকে নজর রাখছে যা ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেবে না কিন্তু তাদের অনেক বেশি অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দেবে।

জাতিসংঘে আল-জাজিরার প্রতিনিধি সাংবাদিক গ্যাব্রিয়েল এলিজোন্ডো বলেন, এর ফলে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় যোগদানে সক্ষম হবে এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কক্ষে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আসন পাবে ফিলিস্তিন।

ভোটাভুটির আগে নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, ‘জাতিসংঘ এখন একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে স্বাগত জানাচ্ছে। সাধারণ পরিষদে আজ শুধু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি রাষ্ট্রকে অধিকার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে না, আজ হামাসের ভবিষ্যত সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।’

অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছে, ‘ফিলিস্তিনে ৩৫ হাজরেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, ৮০ পঙ্গু হয়েছে, দুই মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু ইসরায়েলের পরিকল্পনা পরিবর্তন হয়নি। ধ্বংস এবং বাস্তুচ্যুতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডের নিষ্ঠুর ও বিস্তৃত ধরণকে বিশ্ব এখন বুঝতে শুরু করেছে।’

রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে আরও হাজার হাজার হত্যা করতে প্রস্তুত। রাফাহতে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি ভাবছে যে— তারা আজ বেঁচে থাকবে কি না এবং পরবর্তীতে তারা কোথায় যাবে। অথচ তাদের কোথাও যাওয়ার বাকি নেই।’

রিয়াদ মনসুর আরও বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের সনদ লিখিনি। আমরা আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করিনি। আমরা কেবল জাতিসংঘের আইন প্রয়োগ করার দাবি করেছি। কারণ এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা অস্বীকার করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ ভোট হলো ফিলিস্তিনের অস্তিত্বের পক্ষে একটি ভোট, এটি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্র থেকে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। এ কারণেই ইসরায়েলি সরকার এর এত বিরোধিতা করে, কারণ তারা আমাদের স্বাধীনতা এবং সম্পূর্ণভাবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করে।’

এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবুশাহাব বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ একটি শান্তিপ্রিয় জাতি এবং তারা জাতিসংঘের মাধ্যমে কার্যকরভাবে মানবতার সেবা করার সুযোগ প্রাপ্য। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রমাণ করেছে যে এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে তার স্থানের যোগ্য এবং পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার অধিকারী।

আবুশাহাব আরও বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসাবে আমাদের দ্বায়িত্ব আছে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত হওয়া শর্তাবলীর দ্বন্দ্বের অবসানের জন্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে ১৯৬৭ সালের ৪ জুন এর সীমান্তের ওপর ভিত্তি করে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হলে তা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে।’

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৪ হাজার ৯৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৮ হাজার ৫৭২ জন আহত হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ৩৯ জন নিহত এবং ৫৮ জন আহত হয়েছে।

প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া ৯টি দেশ হলো— আলবেনিয়া, চেশনিয়া, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু ও পালাউ।

বিশ্ব ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে: মাহমুদ আব্বাস

এদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে হওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই ভোটাভুটিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বশাসিত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘আজকের সাধারণ পরিষদের ভোটের পর ফিলিস্তিন জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, রেজুলেশনের পাস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে বিশ্ব ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে এবং ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

এনডিটিভি/পিআর