আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দীর্ঘ ১২ বছর পর মুক্ত জীবনে ফিরতে যাচ্ছেন। গত ৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। এর আগের ৭ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করেছেন অ্যাসাঞ্জ।
অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ এনেছিল। দেশটি দাবি করেছে, অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকসে গোপন নথি ফাঁস করে মার্কিন সেনাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
আর এ অভিযোগ এনে তারা অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে বিচার করতে চেয়েছিল। তবে মার্কিনিরা যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্রে না নিতে পারে সেজন্য তিনি ইকুয়েডরের দূতাবাসে সাত বছর ছিলেন। কিন্তু ইকুয়েডরের নতুন প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছর আগে যখন তাকে দেওয়া রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে নেন তখন তাকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্যের পুলিশ। এরপর দীর্ঘ এই সময় ব্রিটিশ কারাগারের ভেতর কাটাতে হয়েছে তাকে।
অ্যাসাঞ্জ কী কী তথ্য ফাঁস করেছিলেন?
অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসে অনেক গোপন অথবা বিধিনিষেধ দেওয়া প্রতিবেদন ফাঁস করা হয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই যুদ্ধ, নজরদারি এবং দুর্নীতি বিষয়ক।
২০১০ সালে উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে সাধারণ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে মার্কিন সেনারা।
এছাড়া উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাবেক বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংয়ের দেওয়া হাজার হাজার গোপন নথি ফাঁস করে। এসব নথি থেকে জানা যায় আফগানিস্তান যুদ্ধে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে মার্কিন সেনারা।
এগুলো ফাঁস করার পর পুরো বিশ্বে আলোড়ন তৈরি হয়। অন্যান্য দেশগুলোতে যুদ্ধের নামে গিয়ে মার্কিন সেনারা কী কী করছে সেগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করে বিশ্বের বাকি দেশগুলো।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে এগুলো ফাঁস করার কারণে মার্কিন সেনাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে তিনি তাদের সেনাবাহিনীর স্পর্শকাতর ডাটাবেজে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। বিচারের মুখোমুখি করতে দেশটি তার বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ আনে।
তবে অ্যাসাঞ্জ সবসময় দাবি করেছেন মার্কিন সেনারা যেসব অপরাধ করেছে সেগুলো তিনি ফাঁস করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
অ্যাসাঞ্জের আইনি সংগ্রাম : ২০১০ সালে অ্যাসাঞ্জ যখন মার্কিন সেনাদের বর্বরতার তথ্য ফাঁস করছিলেন তখনই তার বিরুদ্ধে এক নারীকে ধর্ষণ ও আরেক নারীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে মামলা করে সুইডেন। আর এরপরই শুরু হয় অ্যাসাঞ্জের আইনি সংগ্রাম। যা দীর্ঘ ১৪ বছর চলেছে।
অ্যাসাঞ্জকে ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর কয়েকদিন আগে তার সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে আনা একটি অভিযোগ স্বীকার করবেন এবং ক্ষমা চাইবেন। এর বদলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিযোগ তুলে নেবে এবং তাকে কোনো কারাদণ্ড দেবে না। কারণ তিনি ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের কারাগারে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি
এনডিটিভিবিডি/২৫জুন/এএ