ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

‌কালিগঞ্জে বাড়ি ঘর ভাংচুর, মারপিটের প্রতিকারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নভেম্বর ১৮, ২০২৪
বাংলাদেশ
‌কালিগঞ্জে বাড়ি ঘর ভাংচুর, মারপিটের প্রতিকারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

শেখ আমিনুর হোসেন, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে চিহ্নিত ভূমিদস্যু জাকির ও মান্নান মেম্বরের নেতৃত্বে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারী ৭টি অসহায় পরিবারকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে বাড়ি ঘর ভাংচুর, লুটপাট এবং মারপিটের প্রতিকারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর '২৪) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কালিগঞ্জের ঘুষুড়ি গ্রামের শহর আলী গাজীর স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় রোজিনা খাতুন। 

তিনি বলেন, আমরা অত্যান্ত অসহায় এবং ভূমিহীন পরিবার। আমাদের কোন জমি জমা না থাকায় হাওড়ার নদীর তীরে ঝুপড়ি ঘর বেধে আমার পিতা আমাদের নিয়ে বসবাস করতেন। সে সময় তৎকালিন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এসিল্যান্ডসহ স্থানীয় ভূমিকর্মকর্তা ও গণম্যান্য ব্যক্তিবর্গ পাশ্ববর্তী ঘুষুড়ি ব্রীজের পাশে নদীর জেগে ওঠা চরে আমাদের বসবাসের জন্য একখন্ড জমি প্রদান করেন। সরকারের দেওয়া ওই জমিতে আমরা দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। দুটি পুত্র সন্তান জন্মের পর আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। সেখান থেকে অতিকষ্টে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বেঁচে আছি। পরিশ্রম করে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পাশ্ববর্তী পরম্পদলোভী ঈমান আলীর পুত্র জাকির হোসেনগং উক্ত সরকারি খাস জমি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে নিজেরা যবর দখলের চক্রান্ত চালাতে থাকে। এতদিন সুবিধা করতে না পারলেও ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুযোগ বুঝে চাম্পাফুল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বর মান্নানের নির্দেশে জাকিরের নেতৃত্বে জহুর ঢালীর পুত্র রফিক, ছাকা গাজী, মোফাই, মোস্ত,আনিছুরসহ অন্যান্যরা আমাদের উক্ত জমি জোর পূর্বক দখলের হুমকি প্রদর্শন করতে থাকে। একপর্যায়ে আমাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ইটভাটায় কাজে জন্য গেলে বাড়ি পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চাম্পাফুল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বর মান্নানের নির্দেশে জাকিরের নেতৃত্বে জহুর ঢালীর পুত্র রফিক, ছাকা গাজী, মোফাই, মোস্ত,আনিছুরসহ ২০/২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ বাহিনী আমাদের বাড়িতে হামলা করে। আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করতে থাকে এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতে থাকা লোহার রড,বাঁশের লাঠি দিয়ে আমাকে বেধড়ক পিটাতে থাকে। এসময় এগিয়ে আসলে আমার মাতা জরিনা খাতুন, বোন ফতেমা খাতুন, ছেলে বাবু, রায়ছুল, ভাবী শরিফাসহ পরিবারের মহিলাদেরকেও মারপিট করে। এসময় তারা আমাদের বাড়িতে থাকা বড় বড় গাছ পালা কেটে নিয়ে যায়। এছাড়া বাড়িতে থাকা নগদ টাকা,স্বর্ণের দুল,২টি মোবাইলসহ মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং বাড়িঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। পরে ঘেরাবেড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের মারপিটে আমিসহ অন্যারা মারাত্মক আহত হয়। আমার বোন ফতেমাও মারাত্মক আহত হয়েছে। তবে তাদের মারপিটে আমি মাজায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হই। আঘাতের ফলে আমি পঙ্গু হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছি। ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত বসতে, শুইতে এমনকি হাটা চলাও করতে পারি না। অন্যের সাহায্যে চলতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ৫/৬ জন মারাত্মক আহত হয়েছি। কিন্তু থানায় এবিষয়ে মামলা দায়ের করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। থানা পুলিশের নিস্ক্রিয়তার ফলে উল্লেখিত আসামীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে আসার চেষ্টা করলে স্থানীয় মেম্বর মান্নান বাধা দিয়ে বলে যে গাড়ী হাসপাতালে নিয়ে যাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো জাকির ও মান্নানগং প্রকাশ্যে হুমকি প্রদর্শন করে বলছেন দেশে এখন কোন আইন নাই। সুতরাং আমরাই আইন। হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিলেও কিছু হবে না। তাদের ভয়ে আমরা এখনো বাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। ওই সন্ত্রাসী ভূমিদুস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং যাতে আমরা বাড়িতে ফিরতে পারি যে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

এনডিটিভি/এলএ