কাপ্তাই লেকের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।
শনিবার দুপুরে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবীদের মাঝে ভিজিএফ (চাল) বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দীপংকর তালুকদার, এমপি, পার্বত্য রাঙ্গামাটি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইসস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. জুলফিকার আলী, পার্বত্য রাঙামাটি জেলার জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বক্তব্য প্রদান করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান বলেন, কাপ্তাই লেক তার সেই আগের সৌন্দর্য, রুপে নেই। এটি যেন নুইয়ে পড়েছে। তবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা কাপ্তাই লেকের আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে চাই। তবে এই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু মৎস্যজীবীদেরই নয়, এলাকার সর্ব সাধারণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
জেলেদের উদ্দেশ্যে করে মন্ত্রী বলেন, আগামী তিন মাস আপনারা লেকে মাছ ধরবেন না। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত মশারি জাল, বেহুন্দী জাল, কারেন্ট জাল এগুলো ব্যবহার করবেন না। জাটকাসহ ছোট মাছ ধরবেন না। আপনারা নিজ সন্তানকে যেমন পরিপূর্ণ করে গড়ে তোলেন তেমনি মাছকেও বড় হতে দিতে হবে। শুধু মন্ত্রী হিসেবেই নয় একজন নাগরিক হিসেবেও কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে যা যা করা দরকার সবকিছুই করা হবে বলে মন্ত্রী এসময় জানান।
তিনি বলেন, আপনাদের লেকের মাছ আপনারাই ধরবেন। অন্য এলাকা থেকে কেউ এসে এই মাছ ধরবে না।
সুতরাং এই লেকের ব্যবস্থাপনায় আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে কাপ্তাই লেক নিয়ে প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে মন্ত্রী এসময় বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, রাঙামাটির বতর্মান ফিস ল্যান্ডিং সেন্টারটি সংস্কার করে আধুনিক ও উন্নত মানের ফিস ল্যান্ডিং স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
কৃষি জমিতে ব্যবহার করা কীটনাশকের ফলে মাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে ফসলের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান মন্ত্রী। তবে কেউ যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করে তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এসময় কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
জেলেদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আপনারা যাতে বংশ পরম্পরায় কাপ্তাই লেকের মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসময় তিনি কাপ্তাই লেকে পোনা অবমুক্ত করেন এবং জেলেদের মাঝে ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধকালীন সময়ে মৎস্যজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়ে সেজন্য সরকার নিবন্ধিত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে বিশেষ ভিজিএফ কার্ড এর মাধ্যমে চাল বিতরণের জন্য ২০১০ সাল প্রথমে ২৫০৮ (দুই হাজার পাঁচশত আট জন) জন মৎস্যজীবী পরিবারকে খাদ্য সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হয়। কোন প্রকৃত মৎস্যজীবী যাতে সরকারের এ বিশেষ সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য প্রতি বছর জেলেদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে ২৬,৮৬৬ (ছাব্বিশ হাজার আটশত ছেষট্রি) জন জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ বছর ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই লেকে সকল ধরণের মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকবে।
এনডিটিভি/পিআর