মস্কোর কাছে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় নিহতদের জন্য শোকপালন করছে রাশিয়া। সারা দেশে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিনোদন এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠানগুলো বাতিল করা হয়েছে। টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপকরা কালো পোশাক পরছেন।
মস্কোর ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত না হলেও সঙ্গীত পরিবেশনার ক্ষেত্রে ক্রোকাস সিটি হলটি ছিল রাশিয়ার সুপরিচিত একটি স্থান। কিন্তু গত শুক্রবারের (২২ মার্চ) রক্তাক্ত হামলার ঘটনাটি এই কনসার্ট হলকে মুহূর্তে নরকে পরিণত করেছে। হামলাকারীরা কেবল গুলি করেই হত্যা করেনি, আগুনে পুড়িয়েও মানুষ মেরেছে।
রাশিয়ার তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনের ছাদ ধসে পড়ছে। ভবনটির বাইরে এখনো পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সিটি হলের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নৃশংস হামলায় নিহতদের আত্মার প্রতি মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। সেই ফুলের স্তূপ ক্রমশ বড় হচ্ছে। গোলাপ ও কার্নেশন ফুলের পাশাপাশি তারা পুতুল ও অন্যান্য খেলনাও রেখে যাচ্ছেন। কারণ নিহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
সঙ্গে একটি বার্তাও ছেড়ে যাচ্ছে অনেকে। যেমন- আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যে একজন বলেছেন, ‘তোমরা ইতর। আমরা তোমাদের কখনও ক্ষমা করবো না।’
মানুষের এই ভিড়ের মধ্যে বিষাদ ও ক্ষোভ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। রোমান নামে একজন বলেন, আমি পাশের একটি ভবনে থাকি। ফলে সেদিন যা ঘটেছে, তা আমি আমার জানালা দিয়ে দেখেছি। ঘটনাটি ভয়ংকর এবং খুবই দুঃখজনক।
ইয়েভজেনি নামে একজন বলেন, যারা এটি করেছে, তারা মানুষ নয়। তারা আমাদের শত্রু। তিনি বলেন, আমি মনে করি, মৃত্যুদণ্ডের ওপর থেকে আমাদের স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া উচিত, অন্তত সন্ত্রাসীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য হলেও।
হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মস্কোর বাসমানি জেলা আদালত তাদের দুই মাস পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মস্কো আদালতের আনুষ্ঠানিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন দালেরদজন মিরজোয়েভ, সাইদাক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা, শামসিদিন ফারিদুনি এবং মুহাম্মাদসোবির ফায়জভ।
মিরজোয়েভ এরই মধ্যে তার দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি তাজিকিস্তানের নাগরিক।
ক্রোকাস সিটি হলে হামলা ও ব্যাপক গুলির ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও বলেছেন, হামলার সঙ্গে আইএস জড়িত এবং এটি নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, নৃশংস এই হামলার পেছনে কোনো না কোনোভাবে ইউক্রেনের হাত রয়েছে। গত শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনে পালানোর চেষ্টাকালে চার বন্দুকধারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তার দাবি, সীমান্ত অতিক্রম করানোর উদ্দেশ্যে ইউক্রেন অংশে তাদের (হামলাকারীদের) জন্য একটি জায়গা প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
কিয়েভ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু এরপরও হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের সংযোগ থাকার কথা প্রচার করে চলেছে রুশ পক্ষগুলো। রাশিয়ার সরকারপন্থি সংবাদপত্র মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস তাদের ওয়েবসাইটে একটি মতামতধর্মী লেখা প্রকাশ করেছে।
‘ইউক্রেনকে অবশ্যই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখাটির উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘কিয়েভ প্রশাসনকে ধ্বংস করার সময় এসেছে... ওই দলের প্রত্যেককে অবশ্যই মরতে হবে। আর এই কাজ করার সামর্থ্যও রাশিয়ার রয়েছে।
জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এনেছে। ভয়াবহ এই হামলার প্রতিক্রিয়া কীভাবে দেখাবে ক্রেমলিন? মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে যে ঘটনা ঘটেছে, ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলা আরও বাড়ানোর ন্যায্যতা আদায়ে রাশিয়ার নেতৃত্ব কি এটিকে ব্যবহার করবে?
সূত্র: বিবিসি বাংলা