নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘স্থায়ী শিরা দুর্বলতায়’ (ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সি) নামক একটি শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার হাতে রক্তজমাট ক্ষত ও পা ফোলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়। এরপরই বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) তার শারিরীক জটিলতার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের পা ফোলার উপসর্গ দেখা দিলে তার একটি পূর্ণাঙ্গ শারীরিক পরীক্ষা ও ধমনী-শিরা সংক্রান্ত বিশেষ টেস্ট করা হয়। এতে তার ‘চিরস্থায়ী শিরা দুর্বলতা’ ধরা পড়ে, যা সাধারণত পায়ের শিরাগুলো ঠিকভাবে রক্তকে হৃৎপিণ্ডের দিকে ঠেলতে না পারার ফলে হয়। তখন রক্ত নিচের অংশে জমা হয়ে পা ফুলে যায়।
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে শুরু হওয়া আলোচনা আরও জোরদার হয় যখন সম্প্রতি নিউ জার্সিতে অনুষ্ঠিত ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে তাকে ফুলে যাওয়া পা নিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। এছাড়া, এই সপ্তাহের শুরুতে বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী সালমান বিন হামাদ আল খলিফার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎকালে তার ডান হাতে আঘাতের দাগও স্পষ্ট দেখা যায়। ফেব্রুয়ারিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকেও প্রেসিডেন্টের হাতে অনুরূপ চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।
‘হ্যান্ডশেক’ ও অ্যাসপিরিনের প্রভাব
ক্যারোলিন লেভিট জানান, প্রেসিডেন্টের হাতে যে আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে, তা বারবার হাত মেলানোর কারণে ‘টিস্যু ড্যামেজ’ বা টিস্যু ক্ষতির ফল, যা তার নিয়মিত অ্যাসপিরিন সেবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। অ্যাসপিরিন হৃৎপিণ্ডের অসুখ ও রক্ত জমাট প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় ও এটি রক্ত পাতলা করে, ফলে কোনো জখমে সহজেই রক্তক্ষরণ বা আঘাতে ক্ষত হয়।
এ বিষয়ে ওয়েক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. ম্যাথিউ এডওয়ার্ডস বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রক্তনালীগুলো দুর্বল হয়, অ্যাসপিরিন গ্রহণ করলে ক্ষত আরও সহজেই হতে পারে। শক্ত করে কারও হাত ধরলে এরকম দাগ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
রোগটি কতটা গুরুতর?
হোয়াইট হাউজের চিকিৎসক শন বারবাবেলা বলেন, প্রেসিডেন্টের দেহে ‘চিরস্থায়ী শিরা-অসামর্থ্য’ ধরা পড়েছে, তবে সেটি ‘সাধারণ ও নিরীহ’ একটি সমস্যা। বিশেষ করে, ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রেসিডেন্টের হার্টে, কিডনিতে সমস্যা কিংবা অন্য কোনো জটিল রোগের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মেরিল লোগান বিবিসিকে বলেন, এই রোগটি এমন এক পরিস্থিতি যেখানে পায়ের শিরা ও কপাটিকা কাজ না করলে রক্ত নিচের দিকে ফিরে যায়, ফলে পা ফুলে যায়। তবে এটি খুব সাধারণ এবং গুরুতর নয়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিয়মিত মেডিকেল-গ্রেড কমপ্রেশন স্টকিংস ব্যবহার ও রাতে পা উপরে তুলে ঘুমানো এই রোগের উপশমে কার্যকর। এছাড়া শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকা, পূর্বে রক্ত জমাট বাঁধার ইতিহাস ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করার অভ্যাসও এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ডা. লোগান বলেন, আমি আমার রোগীদের বলি প্রতিদিন পা ও পায়ের পাতায় ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এপ্রিল মাসে করা তার বাৎসরিক শারীরিক পরীক্ষায় ‘সামগ্রিকভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ’ ছিলেন বলে জানান হোয়াইট হাউজের চিকিৎসক বারবাবেলা।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৭৮ বছর ৭ মাস। ফলে তিনিই হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।
এনডিটিভিবিডি/১৮জুলাই/এএ