ঢাকা , শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

মাগুরায় প্রায় চারশো বছরের লোককথায় মানুষ থেকে কুমিরে হয়ে স্ত্রীর শখ পূরণ

ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
বাংলাদেশ
মাগুরায় প্রায় চারশো বছরের লোককথায় মানুষ থেকে কুমিরে হয়ে স্ত্রীর শখ পূরণ

মাগুরা প্রতিনিধি:  মাগুরার মহম্মদপুরের পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মধুমতি নদী। এই নদীর একটি ঘাটের নাম নদের চাঁদ ঘাট। মাগুরা শহর থেকে ২৫/২৬ কি.মি দূরে অবস্থিত এই ঘাট থেকে এখনও দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন দুরদুরান্ত থেকে। নদের চাঁদ একজন মানুষের নাম।

যাদু বিদ্যা শিখে মানুষ থেকে কুমিরে পরিণত হয়েছিল নদের চাঁদ। পরে স্ত্রীর ভুলের কারণে কুমির থেকে আর মানুষ হতে পারেনি সে। মানুষ থেকে কুমির হওয়ার এই কিংবদন্তি কাহীনি আজও এ এলাকার মানুষের মুখে মুখে ভাসে। নদের চাঁদের এই কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে যাত্রা নাটক গান।

প্রায় চারশো বছর আগে মহম্মদপুরের পাঁচুড়িয়া গ্রামে অতি সাধারণ পরিবারে বাস করতো নদের চাঁদ। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত তার পিতা। নদের চাঁদের তখনও জন্ম হয়নি। জন্মের আগেই নদের চাঁদের বাবা গদাধর পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান। একমাত্র সন্তান বুকে ধরে দিন কাটে তার মায়ের।

দীর্ঘ দশ বছর নদের অন্তর্ধানের রহস্য খুলে বলে স্ত্রী সরলার কাছে। দশ বছর সে কামরুখ ছিল। ওখানে সে এক মহিলার কাছে যাদু বিদ্যা শেখে। এ যাদুর বলে সে কুমীর হতে পারে। এই কথা শুনে সরলা কুমির হওয়ার জন্য বায়না ধরে।

গভীর রাতে নদে দুটি পাত্রের পানিতে মন্ত্র ফুক দিলো। তারপর সরলাকে বললো, একটি পাত্রের পানি গায়ে ছিটিয়ে দিলে কুমির হবে, অন্য পাত্রের পানি ছিটালে সে আবার মানুষ হবে। নদের চাঁদ কুমীর হয়ে গেলো। ভয়ে সরলা দৌড়ে পালাতে গিয়ে পায়ের ধাক্কায় মাটিতে গড়িয়ে পড়লো পেয়ালার পানি। এভাবে স্ত্রীর একটি ভুলে কুমির থেকে আর মানুষরুপে ফিরতে পারলো না নদের চাঁদ ।

মা ডাকলেই নদের চাঁদ ঘাটে চলে আসত। মায়ের হাতের খাবার খেয়ে আবার নদীতে ফিরে যেত। কিছুদিন পর নদী দিয়ে একদল বণিক জাহাজ যোগে যাওয়ার সময় চরে বিরাট একটি কুমির দেখতে পায়। তারা কুমিরটি মেরে ফেলে। পরে জানাজানি হলে লোকজন মৃত কুমিরটি উদ্ধার করে হিন্দু রীতি অনুযায়ী সৎকার করে। নদীর পাড়ে সেই শশ্বানঘাটও রয়েছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী ।

মাগুরা জেলা প্রশাসক মো.অহিদুল ইসলাম বলেন , নদের চাঁদের ঘাটে দর্শনার্থীরা আসেন। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে কাজ করা হবে। এটি মাগুরার একটি পুরানো ঐতিহ্য।

 

এনডিটিভি/এলএ