আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বাকি আর মাত্র দুদিন। দুই প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। দেশটির ভোটাররা আগামী ৫ নভেম্বর তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দেবেন।

কিন্তু যে প্রার্থী সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই যে জয়ী হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ হলো ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না, ভোট হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, বেশিরভাগই হয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস অথবা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। তবে এদের দুজনের মধ্যে কে জয়ী হবেন, সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হবে না।

জাতীয় স্তরের নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন।

ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, জনগণের ভোট বেশি পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনও প্রার্থীকে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এর দু’টি উদাহরণ রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে— ২০০০ ও ২০১৬সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ওই দুটি নির্বাচনে এভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, তারা যথাক্রমে আল গোর এবং হিলারি ক্লিন্টন।

যেভাবে কাজ করে ইলেক্টোরাল কলেজ

নির্বাচনে যে প্রার্থী যে অঙ্গরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিজের দিকে টানতে পারবেন, সেই অঙ্গরাজ্যের সব ভোট তার হয়ে যাবে। মূলত প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি করে ইলেক্টোরাল ভোট থাকে, যা ওই অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার মোটামুটিভাবে সমানুপাতিক হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ার হাতে সর্বাধিক ৫৪টি এবং ভায়োমিং, আলাস্কা এবং নর্থ ডাকোটা (এবং ওয়াশিংটন ডিসি)-র মতো যেসব অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা খুবই কম, তাদের হাতে অন্তত তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট আছে।

সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের হাতে থাকা ইলেক্টোরাল ভোট সেই প্রার্থীকেই দেয়, যিনি ওই অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৪ জন ইলেক্টর রয়েছেন। কমালা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি এই অঙ্গরাজ্যে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই সেখানকার ৫৪ জন ইলেক্টরকে জিতে নেবেন।

যদিও ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের পর আগামী ১৩ ডিসেম্বর ইলেক্টরেরা নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের রাজধানীতে জড়ো হয়ে তাদের দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তবে নির্বাচনের এই পর্যায়টি কেবলই  আনুষ্ঠানিক। কারণ ৫ নভেম্বরের ভোট থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাট, কোন প্রার্থী জিতছেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও কি কেউ পরাজিত হতে পারে?

হ্যাঁ, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও কোনও প্রার্থীর পরাজিত হওয়া সম্ভব। একজন প্রার্থী সারা দেশে হয়ত কম ভোট পেয়েছেন, কিন্তু বেশ কতগুলো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের থেকে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েও ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালে আল গোরকে পরাজিত করেছিলেন, যদিও সাধারণ ভোটে তার জয়ের ব্যবধান ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি।

ওই দুজনের আগে আর মাত্র তিনজন সাধারণ ভোটে না জিতেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সেগুলো উনবিংশ শতাব্দীর ঘটনা। একেক রাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

২০১৬ সালে জনগণের ভোটের নিরিখে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পেয়েছিলেন ৪৮.২ শতাংশ ভোট, আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬.১ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ট্রাম্পের থেকে ২.১ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিলেন হিলারি।

তবে বেশি ভোট পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাভুটিতে হেরে যান হিলারি। তিনি পেয়েছিলেন ২২৭টি ইলেক্টোরাল ভোট, কিন্তু ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৪টি ভোট। টেক্সাসের মতো রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি তো বটেই, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনার মতো ‘সুইং স্টেট’ তাদের বড় অংকের ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে ট্রাম্পের ঝুলিতে চলে যাওয়ার ফলেই হোয়াইট হাউস দখল করা সম্ভব হয়েছিল ট্রাম্পের।

এবার কী হতে পারে

জনমত জরিপ বলছে— ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে কমালা হ্যারিসের। কিন্তু নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পই। নেভাদা, অ্যারিজোনা, মিনেসোটা,পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন— এই ‘সুইং স্টেট’গুলোই ঠিক করবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ফিরছেন কিনা।

মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কিছু অঙ্গরাজ্য আছে, যারা সচরাচর রিপাবলিকানদের দিকে হেলে থাকে। কিছু অঙ্গরাজ্য আবার ডেমোক্র্যাটদের দিকে থাকে। আর কিছু অঙ্গরাজ্য আছে, যারা যে কোনও দিকেই যেতে পারে।

সেগুলোকেই সুইং স্টেট বলা হয়। এই অঙ্গরাজ্যগুলোই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে দেয়।

এনডিটিভি/এলএ