আন্তর্জাতিক ডেস্ক :মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের নিরাপত্তরক্ষীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সোমবার সকালে রাজ্যের একটি জাতীয় সড়কে অতর্কিত এই হামলা চালায় দুষ্কৃতিকারীরা। এ ঘটনায় দুজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনের আঘাত গুরুতর। খবর এনডিটিভির।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে টি লাইজং গ্রামের কাছে জাতীয় সড়কের ওপর আচমকাই হামলা চালায় এক দল দুর্বৃত্ত। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। গুলির আঘাতে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যের নাম মোইরাংথেম আজেশ।
বিষ্ণুপুর জেলার থাঙ্গা নাগারম লেইকাইয়ের বাসিন্দা আজেশ। তার ডান কাঁধে গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে। হামলার পরপরই তাকে উদ্ধর করে ইম্ফলের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (৬ জুন) থেকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মণিপুরে। মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যু এবং ঘর ছাড়ার ঘটনা ঘটেছে মণিপুরের জিরিবাম জেলায়।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, কুকি জঙ্গিদের হামলার মুখে এরই মধ্যে মেইতেই গোষ্ঠীর ২০০ জনেরও বেশি মানুষ গ্রাম ছেড়েছেন। তাদের ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় জিকি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ত্রাণশিবিরে।
জিরিবাম জেলার লামতাই খুনউ, দিবং খুনউ, নুনখাল ও বেগরা গ্রামে সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিরা মেইতেইদের বহু বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কুকিদের উপর পাল্টা হামলা ও বাড়িঘর পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে মেইতেই সংগঠন আরাম্বাই টেঙ্গলের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এক বছরের মধ্যে গোষ্ঠীগত শত্রুতায় জিরিবামে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা না ঘটলেও, লোকসভা নির্বাচনের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফাইজল পুঞ্জির জঙ্গল থেকে জিরিবাম গুলালতল এলাকার কৃষক এস শরৎ কুমার সিংহের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকায় কুকি সম্প্রদায়ের বসতি থাকায় খুনের ঘটনায় জনজাতিদের অভিযুক্ত করে থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় উত্তেজিত জনতা।
মঙ্গলবার অশান্ত ওই এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের। তার আগে ওই এলাকার নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে জিরিবাম জেলায় যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরা। সোমবার সকালে তাদের বহরেই হামলার ঘটনা ঘটলো।
প্রসঙ্গত, তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি ভবনে রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় মোদীসহ ৭২ জন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দিল্লিতে যখন শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান চলছে, সে সময়ই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। রোববার সন্ধ্যায় রিয়াসি জেলার একটি মন্দির থেকে ফেরার পথে পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালায় জঙ্গিরা।
বাসটি যখন শিব খোরি মন্দির থেকে বৈষ্ণো দেবী মন্দিরের বেজ ক্যাম্পের দিকে ফিরছিল, তখন ঘটনাটি ঘটে। জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা পুণ্যার্থীদের বাস লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। বাসচালক গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ভারসাম্য হারিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩৩ জন।
পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালানোর ঘটনায় পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই-তাইয়েবার দুই থেকে তিনজন জঙ্গি জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরের পর এবার মণিপুরেও হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে এলো। মোদীর দ্বিতীয় জমানায় অন্যতম চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল মণিপুর। মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে বার বার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি।
এনডিটিভিবিডি/১০জুন/এএ