ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের, জবাব দিল ভারত

মে ১৫, ২০২৪
আন্তর্জাতিক
নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের, জবাব দিল ভারত

দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত চাবাহার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নের জন্য ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত এবং ইরান। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরপরই এমন পদক্ষেপে ভারতের ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পে সকলেই উপকৃত হবেন। এই নিয়ে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখলে চলবে না।’ অতীতে যে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও চাবাহার বন্দরের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছে, সেই উদাহরণও তুলে ধরেন জয়শঙ্কর।

মঙ্গলবার কলকাতায় নিজের বই ‘হোয়াই ভারত ম্যাটারস’-এর বাংলা সংস্করণের উদ্বোধনে এসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানেই তাকে ভারতের সঙ্গে ইরানের চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমি কিছু মন্তব্য দেখেছি, কিন্তু এটা আসলে যোগাযোগ ও বোঝানোর বিষয় যে এই চুক্তি আসলে সকলের লাভের জন্যই। আমার মনে হয় না এটা নিয়ে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) আগে এইরকম করেনি। যদি অতীতে চাবাহার বন্দর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ লক্ষ্য করি, তবে দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই স্বীকার ও প্রশংসা করেছে চাবাহার বন্দরের বিপুল প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে…আমরা এই বিষয়ে কাজ করব।’

এর আগে সোমবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ এবং ভারতের বন্দর, জাহাজ ও নৌপথ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, চুক্তির অধীনে ইরানের বন্দর ও সামুদ্রিক সংস্থা চাবাহার শহীদ বেহেশতি বন্দরের মালবাহী এবং কন্টেইনার টার্মিনালের অংশগুলো ১০ বছরের জন্য ভারতের কাছে হস্তান্তর করবে। ফলে আগামী ১০ বছর ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনা করবে ভারত।

এতে বলা হয়েছে, চাবাহার বন্দরকে একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং যোগাযোগ কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য তেহরানকে সহায়তা করবে নয়াদিল্লি।

এরপরই মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দেয়, তেহরানের সঙ্গে যে বা যারাই বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ভাবছে, তাদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা জারি থাকবে বলেই জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।

প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই ভারত ও ইরানের মধ্যে এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ২০০৩ সালে ভারত ইরানের চাবাহার বন্দর উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে সেসময়ই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর সন্দেহভাজন পারমাণবিক কার্যকলাপের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর কারণে ভারতের সেই প্রস্তাব থেকে ফিরে আসে।

অন্যদিকে বাণিজ্যিক ও যোগাযোগের দিক থেকে ভারতের জন্য এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতদিন আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় যাওয়ার জন্য ভারতকে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে যেতে হতো। চাবাহার বন্দর হাতে আসায় পাকিস্তানকে এড়িয়ে এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারত সহজেই যোগাযোগ ও বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবে। এই বন্দরকে অদূর ভবিষ্যতে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে ভারত থেকে ইরান হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত একটি নতুন বাণিজ্যিক পথ খুলে যাবে।

এনডিটিভি/পিআর