ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। দেশবাসীর আপনাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে। এই জায়গা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আপনারা সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি - এনপিপির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার যাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে সেসব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল। একইসঙ্গে সেসব রাজনৈতিক দলকে শ্রদ্ধা জানান তিনি, যারা গত ১৬ বছর ধরে একটা ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছে , প্রাণ দিয়েছে।
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এদের চরিত্রের দুটি দিক- একটি জঙ্গি, আরেকটি সন্ত্রাস।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে খালি হাতে লড়াই করে সাধারণত জয়ী হওয়া যায় না। তবে এবার এদেশের ছাত্র-জনতা সেটি প্রমাণ করেছে- একটি ফ্যাসিজমকে সরিয়ে দিয়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেই নির্বাচনে যেন জনগণ ভোট দিতে পারে। নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে পারে। এটা আমাদের প্রত্যাশা। এটাই জনগণ চায়। আমরা জানি- এটা খুব অল্প সময়, এখনো তিন মাস যায়নি। ১৫-১৬ বছরের জঞ্জাল, এই সময়ের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। অর্থনীতিকে মুচড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে চরিত্র তৈরি করেছে, এর বাহিরে গিয়ে কেউ কাজ করে না। খুঁজে পাওয়া যায় না এমন হরফ-ঘুষ খায় না, স্বজনপ্রীতি করে না এমন লোক। শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রশাসনসহ সব জায়গায় দুর্নীতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি সার্চ কমিটি ঘোষণা করেছেন। যদিও প্রত্যাশা ছিলো, সার্চ কমিশন গঠন করার আগে রাজনৈতিক দলেরগুলোর সাথে পরামর্শ করবে। তবে যাই হোক, এটি নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা মনে করছি না।
সরকারের প্রতি বিশ্বাস রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বতী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। যিনি এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তিনি পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। তিনি (ড. ইউনূস) নিজেও বলেছেন, তার রাজনৈতিক ইচ্ছে নেই। আপনারা দায়িত্ব দিয়েছেন সেটি পালন করছি। সেই সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনুরোধ, এ দেশের মানুষ আপনাকে সম্মান দিয়েছেন, দিতে চান। আপনারা এই জায়গা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
রাজনৈতিক সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক সংগ্রাম চলতে থাকে। সংস্কার কার্যক্রম তেমনি চলমান থাকে। আমরা প্রত্যাশা করবো, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সব সংস্কার কিন্তু জনগণের দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে এবং জনগণকে সেটা মেনে নিতে হবে। জনগণের মতামত ছাড়া কোনো সংস্কার দীর্ঘায়িত হবে না। উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু সফল হয় না।
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাট পরিচালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এস এম শাহাদাত, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারিক, এনপিপির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য জহির হাকিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শরীফ মনির হোসেন, বেলাল হোসেন, নবী চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ফরিদ উদ্দিন, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার ফারিয়া জামান, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, নড়াইল জেলা এনপিপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এনডিটিভি/এলএ