ঢাকা , শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

প্রাণ বাঁচাতে রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছে ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি: জাতিসংঘ

মে ০৯, ২০২৪
আন্তর্জাতিক
প্রাণ বাঁচাতে রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছে ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি: জাতিসংঘ

ইসরায়েলি আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। খবর আনাদোলুর।

বৃহস্পতিবার ইউএনআরডব্লিউএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পূর্ব রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সরে যাওয়ার আদেশ জারি করার একদিন পর গত ৬ মে থেকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর জেরে প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি রাফাহ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এতে গাজা উপত্যকায় মানুষ আরেকটি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হচ্ছে।’

সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া সেই বিবৃতিতে ইউএনআরডব্লিউএ আরও বলছে,‘ বাস্তুচ্যুত এই পরিবারগুলোর ক্ষতি অসহনীয়। তাদের যাওয়ার মতো নিরাপদ জায়গা নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের এখন যুদ্ধবিরতি দরকার।’

এদিকে রাফাহতে ইসরায়েলের তীব্র বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১২৯ জন আহত হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে গাজার একটি মেডিকেল সূত্র।

মেডিকেল সূত্রটি আরও বলেছে, নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ ও আহতরা যারা রাফাহ শহরের কুয়েত হাসপাতালে পৌঁছেছে, হতাহতদের মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্রসমূহ বলছে, সোমবার থেকে রাফাহ আবাসিক এলাকাসহ শহরজুড়ে তীব্র বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার রাত থেকে শহরের অন্তত ৫০ জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর সেটাকে উপযুক্ত নয় বলে প্রত্যাখ্যান করে নেতানিয়াহু সরকার। একই সঙ্গে ইসরায়েল রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং- গাজায় প্রবেশের একমাত্র দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

এর আগে সোমবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা পোস্টার, ক্ষুদে বার্তা, ফোনকলের মাধ্যমে রাফায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচল না করতে উৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে রাফাহর পূর্ব অংশে থাকা ফিলিস্তিনিদের অতি শিগগিরই একটি মানবিক এলাকায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা একটি স্থল হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের স্থানান্তরের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।

মূলত ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘হামাসের বাকি ব্যাটালিয়নগুলোকে’ পরাজিত করতে রাফাহ আক্রমণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অন্যদিকে ইসরায়েল রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনার ফলে বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল হিসেবে সেখানে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন, যা গাজার মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।

এদিকে রাফাহতে হামলা করলে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বুধবার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বোমাগুলো ব্যবহার করেছে ইসরায়েল।

তিনি বলেন, ‘যদি তারা রাফাহতে যায়, আমি সেই অস্ত্র সরবরাহ করব না যা রাফাহকে মোকাবেলায় ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।’

রয়টার্স বলছে, ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের জন্য নির্ধারিত বোমার একটি চালান ইতোমধ্যেই আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ওয়াশিংটন ১ হাজার ৮০০টি ২ হাজার পাউন্ড বোমা এবং ১ হাজার ৭০০টি ৫০০ পাউন্ড বোমার একটি চালান থামিয়ে দিয়েছে।

তবে ইসরায়েলের দাবি, রাফাহতে লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে পরাস্ত করতে তাদের অবশ্যই সেখানে হামলা করতে হবে।

এনডিটিভি/পিআর