ঢাকা , বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫

সাত পুরুষ ধরে চলছে পশুর রোগমুক্তির জন্য মিলাদ বা পূজা

জানুয়ারী ১৬, ২০২৫
বাংলাদেশ
সাত পুরুষ ধরে চলছে পশুর রোগমুক্তির জন্য মিলাদ বা পূজা

শেখ আমিনুর হোসেন, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা: গৃহপালিত প্রাণীর রোগ মুক্তির কামনায় মানিক ফকিরের মিলাদ বা মানিকের হাজত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় মাঘ মাসের প্রথম দিন এই  মিলাদ বা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। 

৭০ বছর ধরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের বাঁশতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

মুসলিম ও সনাতন ধর্মের মানুষ মিলাদ বা পূজা জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করে থাকে।

এখানে সনাতন ধর্ম অবলম্বীরা "মানিকের হাজত" পূজা নামে আখ্যায়িত করে এবং মুসলিম ধর্ম অবলম্বীরা মানিক ফকিরের মিলাদ নামে অবহিত করে।

গৃহপালিত পশু, পাখি ও প্রাণী বিশেষ করে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগির রোগ মুক্তি এবং স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধির জন্য প্রার্থানা মাধ্যমে সুস্থতা কামনা করে। এই মিলাদ বা পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর বিশাল মেলার আয়োজন হয়। হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই অনুষ্ঠানে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের সকলেই এখানে একত্রিত হয়ে প্রাণীকুল প্রজন্মের রোগ মুক্তির কামনা করে। পার্শ্ববর্তী ১৭টি গ্রামের মানুষ এ মিলাদ বা পূজায় অংশগ্রহণ করে প্রার্থনা করে।

দেবহাটা উপজেলার বহেরা গ্রামের মারফতি বংশের ফকির আহমেদ শাহ এই মিলাদ বা পূজা পরিচালনা করেন।

প্রকৃতপক্ষে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান হলেও সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা তাকে পূজারী হিসাবে গ্রহণ করে। দুধ, ডিম, টাকা ও হাঁস-মুরগি তার হাতে তুলে দেন। তার কাছ থেকে দোয়া বা মাটি পড়া নিয়ে বাড়িতে ফিরে যায়।

ফকির আহমেদ শাহ বাংলাদেশ মেইলকে বলেন, আমার পূর্বপুরুষ কালাচাঁদ মানিকের নাম অনুসারে এই মিলাদ হয়। পিতা আব্দুল গফুর, দাদা পুটি ফকিরের সাথে এই মিলাদ বা পূজায় আমি তাদের সাথে আসতাম। সেখান থেকেই ৭০ বছর ধরে এই মিলাদ পরিচালনা করি। এই মানিক ফকিরের মিলাদটি মুসলিমদের হলেও সনাতনীরা মানিকের হাজত পূজার পূজারী হিসাবে গ্রহণ করে আমার কাছ থেকে দোয়া  বা আশির্বাদ নিয়ে যায়। সারা বছরের জন্য প্রসাদ নিয়ে যায়। আমার জানা মতে সাতপুরুষ এই মানিক ফকিরের মিলাদ পালন করে আসছে।

এক সময় এই অঞ্চলে প্রচুর গৃহপালিত পশু বিচরণ হত। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হত। ছিল না কবিরাজ। হাতের নাগালে ছিল না  কোন ডাক্তার। কথিত আছে সবাই এই মানিক ফকিরের স্থানে এসে একটু মাটি পড়া ও দুধ পড়া তাবিজ করে দেওয়ার পরে রোগ মুক্তি পেতো। সেখান থেকেই এই মিলাদ বা পূজার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। আজ অব্দি এই মিলাদে প্রার্থনা করে যাচ্ছে হাজারো মানুষ।

সদর উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের শ্যামল কুমার মন্ডল বাংলাদেশ মেইলকে জানান, মানিকের হাজত পূজটি মূলত গরু-ছাগল ভেড়ার রোগ মুক্তির জন্য পালন করা হয়। এই পূজাটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ পরিচালনা  করে। আমরা তাকে অনুসরণ করে থাকি। প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে উৎসাহের মধ্য দিয়ে প্রাণীকুলের প্রজন্ম এবং সুস্থতার জন্য পালন করে থাকে।

তনু মিস্ত্রি (৭) তার মা পূর্ণিমা মন্ডল সাথে  কালিগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর এলাকার খলিশাণী থেকে মানৎ স্বরূপ ফকির আহমেদ শাহর কাছে  একটি মুরগি হস্তান্তর করে।

পূর্ণিমা মন্ডল বাংলাদেশ মেইলকে জানান, আমার গাভীর গায়ে প্রচুর পরিমাণে পক্স হয়।আমি মানৎ করেছিলাম। তার পরপরই পক্স ঠিক হয়ে  যায়। এ কারণে পূজা পালন করার জন্য সেখান থেকে চলে আসছি।

৫ নং শিবপুর ইউনিয়নের সদস্য সন্তোষ কুমার মন্ডল বাংলাদেশ মেইলকে জানান, পশু-প্রাণী সুস্থতার জন্য এই পূজা বা মিলাদ সবাই আগ্রহের সাথে পালন করে যায়। পুরো একটি বছর উপশম হিসাবে মাটি এবং গলায় বেঁধে রাখার জন্য প্রতীকি বস্তু নিয়ে যায়। প্রতিবছর অনুষ্ঠানটির সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়।

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ