ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

সংসদে জাতীয় বাজেট পেশ আজ

Jun ০৬, ২০২৪
অর্থনীতি
সংসদে জাতীয় বাজেট পেশ আজ

দেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব জিনিসপত্রের দাম চড়া। সংকটে আছে রপ্তানি খাত। প্রবাসী আয়ের গতিও কম। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। পতন হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। মূল্যস্ফীতির চাপসহ নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

এমন ধরনের পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব ঘোষণায় যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি ক্ষমতাসীনদের টানা ১৬তম এবং দেশের ৫৩তম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।

আজ বিকালে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী এ বাজেট উপস্থাপন করবেন। এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’। বাজেট বক্তৃতায় আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের কৌশল তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী।

এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার লক্ষ্য থাকবে। আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি বাজেট ঘাটতি পূরণে দেশি-বিদেশি ঋণ নিতে হবে। অতীতের রেকর্ড ভেঙে এবার প্রায় ৬৪ শতাংশ অর্থ পরিচালন ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এক রকম বাধ্য হয়েই আরও ১৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হবে ঋণের সুদ পরিশোধে।

গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বারবারই সরকারের পক্ষ থেকে আশার কথা শোনানো হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার।

এমন চ্যালেঞ্জের মধ্যেই নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে অর্থবিভাগ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থমন্ত্রী কী কৌশল নিচ্ছেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

বাজেট পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রান্তিক মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবারের বাজেটে অগ্রাধিকারে থাকবে।

তিনি বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যেসব খাত দীর্ঘদিন কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে আসছে, সেসব খাত থেকে এবারে কর অব্যাহতির সুবিধা উঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, বাজেটে সেই লক্ষ্য পূরণকে সর্বাগ্রে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী।

বাজেটের আকার ও ঘাটতি-

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা। এবার বাজেটে ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

এই বিশাল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা দাগে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে।

এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণও রয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা-

নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ।

নতুন রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারও বেশিরভাগ আয় করার দায়িত্বটি দেওয়া থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

নতুন অর্থবছরের জিডিপি-

আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়।

অবশ্য বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

কমে যাচ্ছে রিজার্ভ-

উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় পৃথিবীর অনেক দেশ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধি পায়। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধে সুদের হার বৃদ্ধি উন্নয়নশীল দেশগুলোর পুঁজি প্রবাহকে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে একদিকে উন্নয়নশীল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে এবং নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটছে। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে (এমটিবিএফ)।

এনডিটিভি/পিআর