বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে প্রায় সময় দেখা যায় মূল প্রার্থী নিজের মনোনয়ন সংগ্রহ করার পাশাপাশি স্ত্রী সন্তানদেরও নির্বাচনে আনেন। কোনো কারণে প্রার্থীতা বাতিল হলে পরিবারের মধ্যে কাউকে প্রার্থী করার কৌশল থেকে অনেকে এমনটা করেন। কিন্তু মাঝে মাঝে এমনও দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়েন। এবার এমনটাই দেখা যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিতে হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউরোপের নেতৃস্থানীয় এই দেশটির হাউস অব কমন্সের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে একই আসন থেকে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী।
দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে এবারই প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগম। পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে তিনি নির্বাচনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারেই সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক।
তাদের উভয়ের বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়। আফসানা বেগমের বাবা জগন্নাথপুর পৌরসভার এনাতনগরের মৃত মনির উদ্দিন আহমদ। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র ছিলেন।
অন্যদিকে আফসানার সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক জগন্নাথপুর পৌরসভার ইনাতনগের ছেলে। ২০১৩ সালে লন্ডনে তাদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এ আসনে আরও আট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
যুক্তরাজ্য বসবাসরত কয়েকজন জগন্নাথপুরের বাসিন্দা জানান, যুক্তরাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে আটজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এরমধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জগন্নাথপুর উপজেলার দুজন রয়েছেন। জগন্নাথপুরের সন্তান অপর প্রার্থী হলেন নুরুল হক আলী। তিনি এবারই প্রথম লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে গর্ডন অ্যান্ড বোচান আসনে লড়ছেন। তিনি জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের শাহারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে বেশ কয়েকবার তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে আফসানা বেগম জগন্নাথপুরের মেয়ে হলেও তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যেই। সেখানেই তিনি পড়াশুনা শেষ করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে প্রথমবারের মতো বিপুল ভোটে আফসানা বেগম এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি একই দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
বিশ্বের অন্যতম বিশ্ব মোড়লদের দেশে নির্ধারিত সময়ের আগে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে চোখ এখন বিশ্ববাসীর। আলোচিত এই নির্বাচনে বিভিন্ন দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্তত ৩৪ জন ব্রিটিশ নাগরিক। সরকার গঠনের জন্য যেকোনো দলের জন্য প্রয়োজন ৩২৬টি আসন। ধারণা করা হচ্ছে ১৪ বছর পর ব্রিটেনে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বর্তমান বিরোধী দল লেবার পাটি।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ২ জন এবং লেবার পার্টি থেকে ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন থেকে ৬ জন, রিফর্ম পার্টি থেকে ১ জন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস থেকে ১ জন, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট থেকে ১ জন, গ্রিন পার্টি থেকে ৩ জন, সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে ১ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এনডিটিভি/পিআর