ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

‘বাংলা সিনেমা প্রদর্শনীতে উদাসীনতা’, সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা

মে ১৩, ২০২৪
বিনোদন
‘বাংলা সিনেমা প্রদর্শনীতে উদাসীনতা’, সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা

বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের উদাসীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দাবি করে প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন করেছে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ডেডবডি’ সিনেমার নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। রবিবার সন্ধ্যায় এফডিসির সামনে মানববন্ধন করেন তারা। পরে ভিআইপি প্রজেকশন হলে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ সময় নির্মাতা ও পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহবায়ক খোরশেদ আলম খসরু এবং পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চিত্রনায়ক ওমর সানীসহ চলচ্চিত্রের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইকবাল বাংলা সিনেমার প্রতি স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার নানা দিক তুলে ধরেন। একইসঙ্গে সিনেপ্লেক্স তার সিনেমা ‘ডেডবডি’কে মেরে ফেলেছেন বলেও দাবি করেন।

প্রতিবাদ সভায় ইকবাল বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের সিনেমাকে কী করে ধ্বংস করে দেওয়া যায়, তার সুপরিকল্পিত চক্রান্ত করছে সিনেপ্লেক্স। তারা আমাদের দেশি সিনেমা ভালো করে চলুক তা যেন চাচ্ছে না। এ দেশে হিন্দি সিনেমাও চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সের অসঙ্গতি দিন দিন বেড়ে চলছে। তারা এমন সময় বাংলাদেশের সিনেমা শো দিয়ে থাকেন যখন দর্শক সিনেপ্লেক্সে যান না। বন্ধের দিন সকাল আর রাতে বাংলাদেশের সিনেমা শো চালান। শুক্রবার ছুটির দিন সকালে আর রাতে শোতে বাংলাদেশের সিনেমা চলে। তখন দর্শক পাওয়া যায় না। অথচ পিক টাইমে বিদেশি সিনেমাগুলো চালানো হয়। এটা একটা বড় অসঙ্গতি।’

ইকবাল বলেন, ‘আমার সিনেমা ‘ডেডবডি’ ঈদে মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। লায়নস সিনেমাস’সহ বেশ কয়েকটি বড় বড় হলও চূড়ান্ত হয়েছিল। পরে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে, ঈদে অনেকগুলো সিনেমা আসছে, আমরা আপনার সিনেমা আপাতত নিতে পারছি না। আপনি ঈদের দুই সপ্তাহ পরে মুক্তি দেন। তাদের কথামতো আমি দুই সপ্তাহ পরই মুক্তি দেই। কিন্তু এখানেও তাদের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। তারা আমার সিনেমা যে হলে মুক্তি দিয়েছে সে হলগুলো আমিও চিনি না। এক কথায় তারা আমার সিনেমাকে কিল করেছে।’

ইকবাল আরও জানান, ‘সিনেপ্লেক্সে থেকে আমার সিনেমা নামিয়ে দেওয়া হয়নি। আমার ‘ডেডবডি’ আমিই নামাতে বলেছি। তারা যে গেমটা আমার সঙ্গে খেলেছে তার প্রতিবাদেই আমার সিনেমা নামাতে বলেছি। আমি যদি ঈদেও আসতাম, সিনেপ্লেক্স যদি আমার সিনেমা না চালাতো, তাহলেও আমার সিনেমার মৃত্যু ঘটত না, সুপারহিট হতো।’

পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সের শেয়ার মানি নিয়ে তো অসঙ্গতি রয়েছেই। কলকাতার সিনেপ্লেক্সেসহ সিনেমার হলগুলো ফিফটি ফিফটি শেয়ার মানি দিয়ে থাকে। আর আমাদের এখানে প্রযোজককে খুশি মতো শেয়ার মানি দেওয়া হয় ৷ তা আর মানা হবে না। শেয়ার মানির সমতা চাই।’

তিনি বলেন, ‘প্রযোজকরা সিনেপ্লেক্সে ফোন করলে ফোন ধরা হয় না। এসব বন্ধ করতে হবে। এসব বন্ধ করা না হলে আমরা সিনেমা দেওয়া বন্ধ করে দেবো। আর অন্যায়, অসঙ্গতি মেনে নেওয়া হবে না।’

এ সময় সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহবায়ক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষ প্রযোজকদের সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করছে। এটা একজন প্রযোজকের জন্য অসম্মানজনক। আমরা টাকা লগ্নি করে সিনেমা বানাই, আর আমাদের সঙ্গে যা তা! এটা আর হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ডেডবডি’র সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। এ সিনেমাকে এমন শো দেওয়া হয়েছে, যে শোর টিকেট ৫০০ টাকা। আর অফ টাইমে শো চালানোর সিডিউল করা হয়েছে। তা ‘ডেডবডি’র সঙ্গে চক্রান্ত এবং উদাসীনতা ছাড়া কিছু নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের সিনেমার শো নিয়ে পরিচালকদের অভিযোগ রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই শো কমিয়ে দেওয়া হয়। স্টার সিনেপ্লেক্সে তাদের ইচ্ছেমতো সিনেমা চালায়, যা বাংলাদেশের সিনেমার বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র।’

খসরু বলেন, ‘আরও আগে থেকেই প্রযোজক-পরিচালকদের স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেভাবে কেউ প্রতিবাদ করেনি, যেটা ইকবাল করেছে। সিনেপ্লেক্সের নীতিমালা সিনেমা হলের নীতিমালা। সে অনুযায়ী তারা লাইসেন্স পেয়েছে। সেখানে বলা আছে, ৮৫ ভাগ বাংলা সিনেমা চলাতে হবে। কিন্তু হচ্ছে উল্টো। ১৫ ভাগও বাংলা সিনেমা চালানো হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে সিনেমা হলের মালিকরা সিনেমা নিতে আসে সেখানে একজন প্রযোজককে সিনেমা নিয়ে ঘুরতে হয় সিনেপ্লেক্সের কাছে। এটা আমাদের জন্য বড় অপমানের। কখন শো সেটাও জানা যায় না। ওয়েবসাইটে গিয়ে কয়জন লোক দেখতে পারবে? বাংলা সিনেমা নিয়ে সিনেপ্লেক্সের অনীহা বরাবরই দেখছি।’

খসরু বলেন, ‘সকালে এবং রাতে বাংলা সিনেমার শো দেওয়া হচ্ছে। যখন দর্শক হলে যাবে না। সুপরিকল্পিত ভাবে বাংলা সিনেমা ধ্বংসের পায়তারা করছে। ইকবালের সিনেমা নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে, সেটি একজন প্রযোজক ও পরিচালকের জন্য লজ্জার। আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে সিনেপ্লেক্স। এছাড়া আরও নানা অভিযোগ তো রয়েছেই।’

নীতিমালা পরিবর্তন না হলে সিনেমা না দেওয়ার হুমকি দেন খসরু। তাদের দাবি না মানা হলে প্রযোজক-পরিচালকরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে জানান তিনি।

গত ৩ মে দেশের প্রায় ৪০ হলে মুক্তি পায় এমডি ইকবাল পরিচালিত ‘ডেডবডি’। মুক্তির প্রথম দিনই সিনেমাটি স্টারে না চালানোর ঘোষণা দেন তিনি। মুক্তির তিন দিনের মাথায় স্টার সিনেপ্লেক্স সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধ করে।

ভৌতিক ধাঁচের এ সিনেমাতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওমর সানী, রোশান, শ্যামল মাওলা, অন্বেষা, রাশেদ অপু প্রমুখ।

এনডিটিভি/পিআর