নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বুধবার রাজধানীর শুক্রাবাদে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম (পিজিডি) ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। সম্মানিত আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও লেখক মফিদুল হক।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফিরে আসার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছে। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে সবকিছুই অনিশ্চিত ছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন করেছেন। ওই সময়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে টিকে থাকতে পারবে না। বলা হয়েছে- বাংলাদেশ যদি উন্নয়ন করতে পারে তাহলে বিশ্বে আর কোনো দেশে উন্নয়ন অসম্ভব হবে না। তেমনই একটি বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে সকল আশঙ্কাকে দূরে ঠেলে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে পুনর্গঠন করেছেন বঙ্গবন্ধু। এই সময়ে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব না দিলে অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হত না। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা সহসা দেশে প্রত্যাবর্তন করত না। বাংলাদেশ অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন লাভ করেছে তার কোনোটিই অর্জিত হত না।’
উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণেই সকল সংশয়, শঙ্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালেই বলেছিলেন বাংলাদেশ সকল সমস্যা কাটিয়ে একদিন বিশ্বে উন্নয়নে বিস্ময় হবে। আজকে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বহু পূর্বেই উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হত। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক গুরুত্বসহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে ৯ মাসের লড়াইয়ে যে গেরিলা যোদ্ধা পোষাক পরিহিত পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করেছে বঙ্গবন্ধু তার অনুপ্রেরণা। সেই মহামানব ফিরে না আসা পর্যন্ত গেরিলা যোদ্ধাদের ছিল অধীর আগ্রহ। পিতা মুজিব ফিরে আসায় মুক্তির স্বাদ পূর্ণতা পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছে বাঙালির আস্থা ও ভালোবাসা। ফিরে এসেছে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ গঠনের যে অভিযাত্রা ছিল সেটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিস্তব্ধ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। ঘাতকেরা জানতো না ক্যারিশমেটিক লিডারকে হত্যা করলে তাঁর গুণাবলি আরও বেশি শক্তি নিয়ে ফিরে আসে। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে বারংবার তাঁর প্রত্যাবর্তনের জায়গাটি স্পষ্ট করেন। যখনই আমাদের চেতনায় শাণিত হওয়া প্রয়োজন হয়, বাংলাদেশ চর্চার প্রয়োজন হয় তখনই আমরা সুকান্ত, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে ফিরে যাই- শক্তি সঞ্চয় করি।’
দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্বমোড়লের যে থাবা পড়েছিল, যেসব ভাষা উচ্চারিত হয়েছিল- বাংলাদেশ তার কাছে মাথা নত করলে আমাদের স্বাধীনতা নিমজ্জিত হত। আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে পাওয়া। বঙ্গবন্ধুকে বুকে ধারণ করলে একটি দুর্নীতিমুক্ত, আদর্শবাদী, শক্তিশালী আত্মমর্যাদার বাংলাদেশ তৈরি করতে পারব। যাতে কোনো রাষ্ট্র বাঙালির দিকে, বাংলাদেশের দিকে চোখ রাঙাতে না পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পড়িয়ে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে তথ্যপ্রযুক্তি, সফ্টস্কিল, অন্ট্রাপ্রেনারশিপ এবং ল্যাংগুইজে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে মানবিক বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে পারব।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ডিস্ট্রিংগুইশড প্রফেসর ড. এ কে এম নুর-উন-নবী, প্রফেসর ড. আখতার হোসেন, প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান
এনডিটিভিবিডি/১১জানুয়ারি/এএ