শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ‘প্রকৃত অবস্থা’ উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও আগের বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। একইসঙ্গে ১৬ বছরের মধ্যে এই ফলাফলই সবচেয়ে খারাপ। আর এমন অবস্থার পেছনে মূলত দায়ী ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ভরাডুবি। বিশেষ করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ দুই বিষয়ে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ফেল করায় বোর্ডটির পাসের হার গিয়ে ঠেকেছে সবচেয়ে নিচে—মাত্র ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশে।
একইভাবে কমেছে সর্বোচ্চ গ্রেড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, গত বছর যা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯। গতবারের তুলনায় কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭ জন।
শিক্ষাবোর্ডগুলো বলছে, এ বছর ফলাফলে কোনো প্রকার ‘গ্রেস মার্ক’ বা বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়নি। যা পাওয়া গেছে, তা-ই নম্বরপত্রে উঠে এসেছে। ফলে ফলাফলে সহানুভূতির প্রভাব পড়েনি। বরং খাতা মূল্যায়নে কড়াকড়ি, ভেন্যু কেন্দ্র বাতিল, কেন্দ্রে কেন্দ্রে নজরদারির জোরদার তদারকির প্রভাবেই প্রকৃত অবস্থা উঠে এসেছে।
অন্যদিকে আগের ফলের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ২০১১ সালে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২০১২ সালে ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৭ সাল ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৭ দশমিক ৭৭ সাল, ২০১৯ সালে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ, ২০২০ সালে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ (করোনার বছরে অটোপাস), ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। সে অনুযায়ী বিগত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ঠেকেছে তলানিতে।
বোর্ডভিত্তিক ফলাফলে দেখা গেছে, সবচেয়ে ভালো করেছে রাজশাহী বোর্ড—পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপর যশোর ৭৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম ৭২ দশমিক ০৭, আর ঢাকা ৬৭ দশমিক ৫১ শতাংশ।
তলানিতে অবস্থান বরিশাল বোর্ডের। শুধু ইংরেজি (পাসের হার ৬৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ) আর গণিত (৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ)—এই দুটি বিষয়ের ব্যর্থতাই বোর্ডটিকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে।
বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কোনো পরীক্ষার্থীকেই বাড়তি নম্বর দিইনি। পরীক্ষার পরিবেশ ছিল স্বচ্ছ ও নকলমুক্ত। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অবস্থাটাই ফুটে উঠেছে। পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে আমরা যথাযথ নিয়ম মেনে চলেছি। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল পর্যন্ত সবাই কঠোরভাবে কেন্দ্র তদারকি করেছে। আমি নিজেও বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এবার স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল—শিক্ষার প্রকৃত মান যাচাই করতে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করেই আমরা কঠোরভাবে পরীক্ষাটি পরিচালনা করেছি। ফলে এবার যে ফলাফল এসেছে, সেটিই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অবস্থা প্রতিফলিত করেছে।
অধ্যাপক খোন্দকার আরও বলেন, পড়াশোনায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এখন সময় এসেছে কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহির। বিদ্যালয়গুলোতে শুধু ক্লাস রুটিন থাকলেই হবে না, সেটি কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটি তদারক করতে হবে। উপজেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রশাসন পর্যন্ত ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ধীরে ধীরে শিক্ষার মানে অগ্রগতি আসবে।