শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ভিডিও চিত্র ধারণ করতে যাওয়ায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী হাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকরা। এ হামলায় অন্তত ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে সাতজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- আশিকুর রহমান হৃদয়, ইমরান হোসাইন, সুজন মাহমুদ, পলাশ খান, বরকত মোল্লা, রুহুল আমিন, আব্দুর রহিম। আহতদের মধ্যে পলাশ খান, সুজন মাহমুদ, আশিকুর রহমান হৃদয় ও বরকত মোল্লাসহ কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস ফরাজী। বেলা ১১টার দিকে সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা প্রকাশ্যে ভোট দিতে ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করে ভোট নিচ্ছিলেন। এ তথ্য পেয়ে ভিডিও ধারণা করতে যান আশিকুর রহমান হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এসময় মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাজ পরিহিত এক ব্যক্তি তাদের প্রথমে বাধা দেন। পরে তাদের কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান। অন্য সাংবাদিকরা তাদের ছাড়াতে গেলে মোটরসাইকেল প্রতীকের কমপক্ষে ৫০ জন সমর্থক তাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। পরে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর।
আহত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, “আমরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি কেন্দ্রের মধ্যে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা। পরে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করতে গেলে সবুজ শার্ট ও মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাজ পরা এক যুবক আমাদের বাধা দেয় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে আমার সঙ্গে থাকা অন্য সহকর্মীরা আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর ভাই ইমন ফরাজীর নেতৃত্বে অনেক লোক এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলে তারাও আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।”
আহত আরেক সাংবাদিক বরকত মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয়, আমরা প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিলাম। তারা তখন সরে যায়। কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিকের পরিচয়পত্র দেখলেই হামলাকারীরা মারধর শুরু করে।”
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, “এখানে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া একজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকায় পাঠানো হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, “আমরা খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। যারা আহত হয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনডিটিভি/পিআর