মো: তানজিম হোসাইন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সর্দি-কাশি, জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ১৫০-২০০ রোগী এসব লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। বায়ুদূষণ এবং ঋতু পরিবর্তনকেই এ সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইফতেখার বলেন, “এখন আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে সবাই সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। দিনের বেলায় গরম এবং রাতে ঠাণ্ডা থাকায় শরীরের জন্য এই আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। এর সাথে বায়ুদূষণও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। ধুলা ও ধোঁয়ায় ভরা শুষ্ক বায়ুমণ্ডল এই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, বর্তমানে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। এ সময়ে হাঁপানি এবং অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগীদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
আন্দরকিল্লা এলাকার স্কুল শিক্ষিকা তানজিনা নাসরিন, যিনি মাসখানেক আগে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হন, এখনো কাশির সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি জানান, “প্রথমে ডাক্তারের দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক কিছুটা কাজে আসলেও কাশি আবার বেড়ে যায়। এক্স-রে করে দেখা গেছে ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে।”
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা আসিফুল ইসলাম জানান, "বাচ্চাদের সর্দি-কাশি জ্বর লেগেই আছে। কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ফ্লু’র প্রকোপ বাড়ে। তারা প্রতি সপ্তাহে সংক্রমণের মাত্রা পরিমাপ করে সংক্রমণকে মধ্যম, উচ্চ, এবং অত্যন্ত উচ্চ স্তরে ভাগ করেন। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এ বছর সর্দি-কাশি এবং জ্বরের মতো মৌসুমী রোগের প্রকোপ অন্য বছরের তুলনায় বেশি।
এ বিষয়ে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, “ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় সর্দি, কাশি এবং শ্বাসজনিত সমস্যার বিস্তার স্বাভাবিক। তবুও, সকলের উচিত সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।”
চট্টগ্রামে সর্দি-কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের দ্রুত বৃদ্ধি এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে বায়ুদূষণের নেতিবাচক প্রভাব জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের ওপর জোর দিচ্ছেন, বিশেষ করে শিশু এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য। সঠিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।