অমুসলিমদের দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ জিম্মাদারি হলেও মুসলিমদের আকিদা-কর্মের পরিশুদ্ধতার জন্যও তাবলিগ করা যায়। যেমন কোনো খাস আমল ও বিধানের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাবলিগ হতে পারে, শিরক-বিদআত ও নাস্তিকতার ব্যাপারে সতর্কতা তৈরির জন্যও তাবলিগ হতে পারে।
অনেকে তাবলিগ জামাতের সমালোচনা করে বলে থাকেন যে, বর্তমানের তাবলিগ জামাত শুধু মুসলমানদের তালিম দেয়, অমুসলিমদের কাছে তাবলিগ করে না। এটি সঠিক কথা নয়। না জেনে এধরণের কথা বলা থেকে সতর্ক হওয়া উচিত। অন্যথায় মুসলমানের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার গুনাহ নিজের আমলনামায় নিতে হবে।
মূলত তাবলিগওয়ালারা যেমন দ্বীন থেকে ছিটকে পড়া মুসলিমদের খাঁটি মুসলিম হওয়ার দাওয়াত দেন, তেমনি অমুসলিমদের মাঝেও দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করে থাকেন। আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশে অনেক অমুসলিম তাবলিগের নিসবতে মুসলমান হয়েছেন। ভারতের মাওলানা কালিম সিদ্দীকীর হাতে অসংখ্য মানুষ মুসলমান হয়েছেন এবং হচ্ছেন। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কালিম সিদ্দীকীর কাছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বলবীর সিং, যিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নিজের নাম রাখেন মুহাম্মদ আমির। একটি মসজিদ ধ্বংসের বদলে মুহাম্মদ আমির প্রায় ১০০টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
তাছাড়া অমুসলিমদের কাছে দ্বীন পৌঁছে দেওয়া যেমন তাবলিগ, তেমনি মুসলমানদের কাছে দ্বীনের কথা পৌঁছে দেওয়ার নামও তাবলিগ। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- فَلْيُبْلِغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ ‘ফাল-ইয়ুবাল্লিগিশ শাহিদুল গায়িব’ তথা ‘উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৭৩৯)
হাদিসে দেখুন তাবলিগ শব্দটি এসেছে মুসলমানদের ক্ষেত্রে। নবীজি উপস্থিত মুসলমানদের বলেছেন, অনুপস্থিত যারা, তাদের কাছে তাবলিগ করতে। আর এ কথা তো জানাই যে, বেশকিছু মুসলমান সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সুতরাং এখানে মুসলিম ও অমুসলিম সবার কাছেই তাবলিগ করার কথা পরিষ্কার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।