নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই হাত স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইতে গাইতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শাহাদাত হোসেন নামের এক যুবককে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি উদঘাটন হয়েছে হত্যাকাণ্ডের রহস্যও।
মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী সন্দেহে শাহাদাতকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযুক্তরা ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপে পোস্ট করে সদস্যদের জড়ো করে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শাহাদাতকে।
পুলিশ জানায়, ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী ওরফে জুয়েল (৪২) এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ছিনতাইকারী সন্দেহে শাহাদাতকে আটকিয়ে মারধরের একটি ভিডিও ওই গ্রুপে পোস্ট করে গ্রুপের সদস্যদের আহ্বান জানানো হয়। গ্রুপে ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘যাকে ধরা হয়েছে তিনি মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী। তাকে মারতে হবে, সবাই আসেন।’ এরপর গ্রুপের সদস্যরা দফায় দফায় এসে পেটান শাহাদাতকে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ। এ সময় পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান উপস্থিত ছিলেন।
হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন- মো. সালমান (১৬) এবং আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)। এদের মধ্যে ইফাত চান্দগাঁও এলাকার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন।
ভিডিও ফুটেজের বরাত দিয়ে কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, মৃতপ্রায় শাহাদাতের গাল চেপে ধরে ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন গ্রেপ্তার সালমান। সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এ ভাইয়া সবাই একটা একটা সেলফি তুলে চলে যান।’
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গ্রেপ্তার ফরহাদ জুয়েল এলাকায় আগে থেকে ইট-বালি সরবরাহের ব্যবসা করেন। ৫ আগস্টের পর ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলেন। ওই গ্রুপের শতাধিক সদস্য রয়েছে। গ্রুপের সদস্যদের ব্যবহার করে জুয়েল নানান অপকর্ম করে আসছিলেন।
বিগত সরকারের সময়ে নাছিরাবাদ এলাকায় যারা ইট-বালি সরবরাহের ব্যবসা করতেন তারা সবাই ছিলেন তৎকালীন সরকারদলীয়। তবে গ্রেপ্তার ফরহাদ জুয়েলের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই বলে জানান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ।
গত শনিবার চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে এক যুবককে মারধরের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, নীল রঙের গেঞ্জি এবং জিন্স প্যান্ট পরা এক যুবক ঢুলছেন। তার দুই হাত বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের পাইপের সঙ্গে। ওই যুবককে ঘিরে গোল হয়ে কয়েকজন যুবক চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইছেন। ভিডিওতে কয়েকজন যুবকের হাতে লাঠিও দেখা গেছে। পরে মারধরের শিকার ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১৪ আগস্ট ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে এ ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসে গত শনিবার। হত্যার পর ওই যুবকের মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল নগরের প্রবর্তক মোড়ে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায়।
ঘটনার পরদিন পাঁচলাইশ থানায় ভিকটিমের বাবা মো. হারুন অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। শাহাদাত হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। স্ত্রী নিয়ে থাকতেন চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। গত ১৩ আগস্ট সাগর নামের এক বন্ধুর কাছে পাওনা টাকা আনতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন শাহাদাত।
কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, সাগর নামের যে বন্ধু শাহাদাতকে ডেকে নেন তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। শাহাদাতকে মারধর করে হত্যার ঘটনায় প্রায় ২০ জন জড়িত। গ্রেপ্তার তিনজন শাহাদাত হত্যায় জড়িত বলে স্বীকার করেছেন এবং হত্যার যাবতীয় বিবরণ দেন তারা। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এনডিটিভিবিডি/২৫সেপ্টেম্বর/এএ