ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চায় তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে। এভাবে উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য আরও অনেক বেশি সময় প্রয়োজন। সব নির্বাচন একবছরেও শেষ হবে না। আপনারা যদি চান সেই এক বছরের বেশি সময় পরে গিয়ে জাতীয় নির্বাচন করবেন, তাহলে বলব এ বিলম্বিত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য আপনাদের মতলব কি?
তিনি বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এজন্য নির্বাচনমুখী যা যা সংস্কার প্রয়োজন তা করুন। কোনো বাহানায় নির্বাচন বিলম্বিত করবেন না।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফেনী শহরের মিজান ময়দানে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এ জনসভা আয়োজন করা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি কোনো অবস্থাতেই এসবের জন্য মে-জুনের বেশি সময় লাগে না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। অবশ্য প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য সকল প্রকার কর্মকাণ্ড করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কোনো কোনো দল দাবি করছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিতে হবে। কেউ কেউ দাবি করছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন করতে হবে। তাদের উদ্দেশ্য ভালো কি মন্দ তা বলতে চাই না। কিন্তু এটুকু বলব যারা অনুপাত ভিত্তিক নির্বাচন চান, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অনুপাত নেই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আপনারা সাংবিধানিকভাবে যে ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিকভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন এ নৈরাজ্যের পেছনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার যেমন ষড়যন্ত্র রয়েছে, তেমনি আপনার সরকারেও হাসিনার দোসররা বসে আছে। উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রশাসনের সব পর্যায় থেকে হাসিনার দোসরদের বাদ দিতে হবে। আপনারা উদাসীন থাকলে হবে না।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠিন হাতে দমন করুন। প্রশাসনের সর্বস্তর ও উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের দমন করুন। যারা ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনভিজ্ঞতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল এ নতুন বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে নিস্তার পাবে। আমরা দেখছি কয়েকজন উপদেষ্টার অনভিজ্ঞতার কারণে ভ্যাট-ট্যাক্স বসিয়ে এ রমজানের শুরুতে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে পারেন বাজারে সরবরাহ বাড়ান। ভ্যাট-ট্যাক্স কমাতে হবে। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, মানুষ সংস্কারের চাইতে সংসার বেশি বুঝে। মানুষকে স্বস্তি দেন। রমজানে যেন দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে না যায় সেজন্য আমরা সতর্ক করছি।
শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসিনা এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত বিশ্ব খুনি, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। সারা বিশ্ব তাকে সেই সনদ দিয়েছেন। এখন দরকার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা। ইতোমধ্যে অনেক মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা এ গণহত্যার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ এ দায় এড়াতে পারে না। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে তারা রাজনীতিসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড করতে পারবেন কি না।
এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে এদিন দুপুর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে মিজান ময়দানে জড়ো হন। দীর্ঘসময় পর শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নেতাকর্মীরা।
ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এসময় জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।