ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

কোটা আন্দোলনের প্রভাব বাজারে, বেশিরভাগ সবজি ১০০ টাকার ওপরে

Jul ১৭, ২০২৪
অর্থনীতি
কোটা আন্দোলনের প্রভাব বাজারে, বেশিরভাগ সবজি ১০০ টাকার ওপরে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগে থেকেই চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম আরও উসকে দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলন। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ১০০ টকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ও গাজর এই দুটি সবজির কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে।

বুধবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বাজারে সবজি কিনতে আসা সাধারণ মানুষ দাম শুনে হতাশা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ আক্ষেপের সুরে বলছেন, ‘বাজার থেকে কিনে খাওয়ার মতো কিছু নেই।’

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার সবজির দাম একটু বেশি। বৃষ্টির কারণে গত কয়েকদিন ধরেই সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে সবজির দাম আরও বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন খরচও কিছুটা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এখন সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। সব থেকে কম দাবি পেঁপের কেজিও ৬০ টাকার নিচে মিলছে না। অর্থাৎ বাজারে এখন ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। করলার কেজি ১৫০ টাকার ওপরে গেছে। সেঞ্চুরি হয়েছে ভেন্ডির (ঢেঁড়শ) দামেও। বেগুন, ঝিঙা, কচুর লতি, কচু, কাঁকরোলের কেজিও ১০০ টাকা হয়ে গেছে। ছোট একটি ফুলকপিও ১০০ টাকার নিচে মিলছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো ও গাজর। মান ও বাজার ভেদে টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

টমেটো ও গাজরের এমন দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, ‘এখন টমেটো ও গাজরের সিজন না। আমদানি করা ও স্টোরে থাকা টমেটো এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আর যে গাজার পাওয়া যাচ্ছে তা আমদানি করা। এ কারণে এ দুটি সবজির দাম বেশি।’

তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে এখন কেজি কেজি টমেটো ও গাজার কেনার মানুষ খুব কম। বেশিরভাগ মানুষ এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) করে টমেটো, গাজার কিনছেন। অন্যান্য সবজির দামও অনেক বেশি। সহসা সবজির দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না।’

শান্তিনগরে সবজি বিক্রিতো ফয়সাল বলেন, ‘অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সবজির দাম আগে থেকেই চড়া। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সবজির দাম আরও একটু বেড়েছে। বেশিরভাগ সবজি কেজি এখন ১০০ টাকার ওপরে। এই কপির (হাতে একটা ছোট ফুলকপি নিয়ে) দামও ১০০ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘সবজির দামে আমরাও আবাক। কিন্তু আমাদের হাতে তো কিছু নেই। আমরা বাজার থেকে বেশি দামে কিনে আনছি, সে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সবজির দাম বেশি হওয়ার কারণে আমাদের বিক্রি কমে গেছে। লাভও কম হচ্ছে। দাম কম থাকলে আমাদের ব্যবসা ভালো হয়।’

এদিকে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে করলা ও উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৬০ টাকা। ঝিঙে বিকি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। ভেন্ডির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। কচুর লতি, কচুর মুখি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা।

এছাড়া পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১১০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়া কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।

রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসা এক যুবক বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর আস্বাভাবিক দাম। কোনো কিছুতে হাত দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। করোলার কেজি দেড়’শ টাকা, টমেটো, গাজরের কেজি ২০০ টাকার ওপরে। অধিকাংশ সবজির কেজি ১০০ টাকার ওপরে। দেশে কী এমন হয়েছে সবজির এত দাম হবে? ৫০০ টকার বাজার করলে প্যাকেটের এক কোনায় পড়ে থাকছে। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।’

সবজির দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন মালিবাগ বাজারে বাজার করতে আসা মো. আজগার আলীও। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ এখন খুব কষ্টে আছে। সবজির দাম শুনলেই রাগ উঠছে। বাজার থেকে এখন একটা-দুইটার বেশি সবজি কেনার মতো অবস্থা নেই। বাজারে যেন কোনো মনিটরিং নেই। প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বড়ছে। এভাবে চলতে পারে না। যাদের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব তাদের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

মালিবাগের সবজি বিক্রেতা খায়রুল হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই সবজির দাম একটু বেশি। মানুষ সবজির দাম শুনে আমাদের কাছেও হতাশা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ তো বলেই ফেলছেন- থাক আজ কিছু কিনবো না বা এই সবজি খাবো না।’

তিনি বলেন, ‘‘আড়তে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম রয়েছে। আমরা তো আড়তে গিয়ে খুব একটা দামাদামিও করতে পারছি না। কম দাম বললেই আড়ত থেকে বলে, ‘কোনো কথা হবে না, দাম কমানোর সুযোগ নেই, পছন্দ হলে নেন, না হলে ভাগেন’। অতিরিক্ত দাম হওয়ার কারণে আমরাও কম কম সবজি কিনছি।’’

কাওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. আলামিন বলেন, ‘বৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে এখন সবজির দাম বেড়েছে। রাস্তার সমস্যা হওযার অজুহাত দিয়ে পরিবহন চালকরাও সবজি পরিবহনে বেশি ভাড়া চাচ্ছেন। সবকিছু মিলেই এখন দাম একটু বেশি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সহসা সবজির দাম কমবে না।’

এদিকে সবজির পাশাপাশি স্বস্তি মিলছে না আলু, পেঁয়াজের দামেও। নতুন করে এ দুটি পণ্যের দাম না বাড়লেও আগে থেকেই চড়া। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। পেঁয়াজের কিজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
মাছ ও মুরগির দামেও রয়েছে অস্বস্তি। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ ও চাষের কই মাছের কেজিও ২০০ টাকার নিচে মিলছে না। এ মাছগুলোর কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিংড়ি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এনডিটিভিবিডি/১৭জুলাই/এএ